বিনোদন ডেস্ক : আরজি করকাণ্ডে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে এক যুবকের— এমনই দাবি তোলা হয়েছে রাজ্যের শাসক দলের পক্ষ থেকে। একটি টুইটও করেন নেতা অভিষেক। তারপর দেবও বললেন— ‘আমিও প্রাণ হারানোর বিচার চাই।’
আরজি কর হাসাপাতেলের ভেতরে কর্তব্যরত জুনিয়র ডাক্তারকে খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় নড়েচড়ে বসে বাংলা। নিজেদের সহকর্মীর বিচার চেয়ে প্রতিবাদে শামিল হয় জুনিয়র ডাক্তাররা। প্রায় এক মাস ধরে রাস্তায় ক্রমাগত বিচারের দাবিতে সরব হয়েছেন তারা, যা নিয়ে সমাজের বিভিন্ন মহল থেকে নানা ধরনের প্রতিবাদ উঠেছে। জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফেরার অনুরোধ করেছিলেন স্বয়ং সুপ্রিম কোর্টও। তবে তারা তাদের সিদ্ধান্তে অনড়।
এদিকে শুক্রবারের এক ঘটনা তাদের ফেলে দিল প্রশ্নের মুখে, তাদের এই আন্দোলনের কারণে কি চলে গেল একটি তরতাজা প্রাণ? জানা যায়, হুগলির কোন্নগরে বাইক দুর্ঘটনার কবলে পড়েন বছর ২৪-এর এক যুবক। ওই যুবককে আরজি কর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল শুক্রবার সকালে। হাসপাতালের তরফে তাদের জানানো হয়, পর্যাপ্ত ডাক্তার নেই। রোগীকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে। কিন্তু ততক্ষণে প্রবল রক্তক্ষরণে ঝিমিয়ে পড়েছিলেন যুবক। শেষ পর্যন্ত দুপুর ১২টা নাগাদ মৃত্যু হয় সেই যুবকের।
এ নিয়ে সামাজিকমাধ্যমে পোস্ট করেছিলেন তৃণমূল নেতা, তথা দলের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়! তিনি লিখেছেন—কোন্নগরে বাইক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত এক যুবক কার্যত কোনো চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেল। তিন ঘণ্টা ক্রমাগত রক্তক্ষরণ হয় তার। আরজি করের মর্মান্তিক ঘটনার প্রতিবাদে চিকিৎসকদের যে কর্মবিরতি, তার জেরেই আজ এ পরিণতি। আমি মানছি— জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিটি দাবি ন্যায্য। তারা কোনো অন্যায় দাবি করছেন না। কিন্তু আমার একান্ত অনুরোধ, পরিষেবা চালু রেখে প্রতিবাদ চলুক।
এর পরই রাতের দিকে দেখা যায় অভিষেকের সেই পোস্ট শেয়ার করলেন দেব। তিনি যেমন অভিনেতা, তেমনই তৃণমূলের নির্বাচিত সংসদ সদস্যও। এক্স হ্যান্ডেলে লিখলেন— ‘আমিও এই প্রাণ হারানোর বিচার চাই। আমিও চাই আমাদের আইনি ব্যবস্থায় বদল আসুক। কিন্তু অন্য প্রাণের বিনিময়ে নয়।
জানা গেছে, ওই যুবকের দুই পায়ের ওপর দিয়ে চলে যায় লরি! গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় শ্রীরামপুরের হাসপাতালে। সেখান থেকে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কলকাতায়।
আজ (শুক্রবার) সকালে আহত যুবককে নিয়ে আরজি কর হাসপাতালে পৌঁছান পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের অভিযোগ, একবার আউটডোর, একবার এমারজেন্সিতে পাঠানো হয়। এভাবে ফেলে রাখা হয় প্রায় তিন ঘণ্টা। তারপর ধীরে ধীরে রক্তক্ষরণে প্রাণ হারান ওই যুবক; কার্যত কোনো চিকিৎসা ছাড়াই।
তারা আরও বলেন, আরজি করে তাদের বলা হয়েছে— ডাক্তার কম থাকায় অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে।
যদিও বিরোধীদের দাবি, এটি শাসক দলের চক্রান্ত। কারণ রাতে এ অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে নস্যাৎ করে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের নথি সামনে আন হয়, যেখানে দেখা যায়— যথাযথ চিকিৎসা হয়েছে ওই যুবকের। এমনকি ভর্তি হওয়ার কথাও লেখা রয়েছে তার প্রেসক্রিপশনে ।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, ওই যুবককে নিয়ে আসা হয়েছিল ট্রমা কেয়ার বিভাগে। সেখানে অর্থপেডিক বিভাগের চিকিৎসকরা তাকে দেখেন । এছাড়া জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরাও তাকে পরীক্ষা করেন। দেখা যায়, যুবকের মাথায় ও দুই পায়ে গুরুতরভাবে আঘাত লেগেছে। এটি পরিবার জানত। পরিবারের অনুমতি নিয়ে সিটি স্ক্যানও করানো হয়। তবে শারীরিক অবস্থার অবনতির জন্য ওই যুবকের মৃত্যু হয়।
ঊষার আলো-এসএ