বিনোদন ডেস্ক: কলম্বিয়ার সঙ্গীতশিল্পী ক্যারোল জি-এর নাম শুনেছেন? টেলর সুইফট যেমন গত কয়েক বছরে শিরোনাম এবং কনসার্ট টিকিট বিক্রিতে আধিপত্য বিস্তার করেছেন, ক্যারোল জিও তেমনি লাতিন আমেরিকান একজন পপ তারকা, যার ভিডিও গত কয়েক বছর ধরে অনলাইনে সবচেয়ে বেশি দেখা হয়েছে।
ভিডিও সরবরাহকারী ভেভোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২১, ২০২২ এবং ২০২৩ সালে ক্যারোল জি-এর গানের ভিডিওগুলো বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি দেখা হয়েছে। ২০২৩ সালে তার গানের ভিডিও ভেভোতে ৪.৭ বিলিয়ন বার দেখা হয়েছিল।
কে এই ক্যারোল জি?
১৯৯১ সালে কলম্বিয়ার মেডেলিন শহরে জন্মগ্রহণ করা ক্যারোল জি’র পুরো নাম কারোলিনা গিরালদো নাভারো। ছোটবেলা থেকেই তিনি গায়িকা হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। ২০০৫ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে তিনি কলম্বিয়ান এক্স ফ্যাক্টর-এ অংশ নেন। তবে শুরুতে তার সাফল্য আসেনি।
২০১৪ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান ইংরেজি শেখার জন্য এবং বিভিন্ন ধরনের ছোট ছোট কাজের জন্য। এক পর্যায়ে তিনি তার সঙ্গীতের স্বপ্ন ত্যাগ করার কথা ভাবলেও, তার বাবা তাকে সাহস যোগান।
যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন তিনি বোস্টনে একটি সঙ্গীত ব্যবসা সম্মেলনে যোগ দেন, যা তাকে সঙ্গীত জগতের কার্যক্রম বুঝতে সাহায্য করেছিল।
সঙ্গীতে বড় ব্রেকথ্রু
২০১৭ সালে তার প্রথম বড় ব্রেকথ্রু আসে ‘আহোরা মে ল্লামা’ গান দিয়ে। যা পুয়ের্তো রিকোর শিল্পী ব্যাড বানির সঙ্গে করা একটি যৌথ প্রচেষ্টা। এরপর ২০২৩ সালে তার অ্যালবাম মাঞানা সেরা বোনিতো ইতিহাস সৃষ্টি করে। এটিই প্রথম পুরোপুরি স্প্যানিশ ভাষার অ্যালবাম, যা মার্কিন অ্যালবাম চার্টে শীর্ষে ওঠে।
লাতিন সঙ্গীতের উত্থান
কারোল জি’র সাফল্য কেবল তার কঠোর পরিশ্রমের জন্য নয়; এটি লাতিন সঙ্গীতের উত্থান এবং স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের জনপ্রিয়তায় সাহায্য পেয়েছে।
আমাজন মিউজিকের লাতিন সংগীত প্রধান রোকিও গেরেরো বলেন, স্ট্রিমিং সঙ্গীত জগতকে গণতান্ত্রিক করেছে। এটি এমন শিল্পীদের জন্য বিশ্বব্যাপী দর্শকদের সামনে আসার সুযোগ তৈরি করেছে, যাদের গান মূলধারার রেডিও স্টেশনে প্রচার হতো না।
যুক্তরাষ্ট্রে এখন লাতিন সঙ্গীত দ্রুত বর্ধনশীল, যা ২০২৩ সালে ১.৪ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। যার ৯৮ শতাংশই স্ট্রিমিং থেকে এসেছে।
সমালোচনা ও বিতর্ক
ক্যারোল জি বিভিন্ন পুরস্কার ও প্রশংসা কুড়ালেও, তিনি সমালোচনারও শিকার হয়েছেন। তার কিছু গানের ভাষা এবং ‘বিচোটা’ শব্দের ব্যবহার বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। তবে ক্যারোল জি বলেছেন, তিনি শব্দটিকে ক্ষমতায়নের অর্থে পুনঃব্যাখ্যা করেছেন।
ব্যবসা ও দাতব্য কাজ
ক্যারোল জি’র নাম এখন শুধু সঙ্গীতেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি ক্রোকস, কাপ্পা, স্মিরনফ এবং লোয়েভের মতো ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করেছেন। তার কোম্পানি গার্ল পাওয়ার ইনক এবং দাতব্য প্রতিষ্ঠান কন কোরা ফাউন্ডেশন নারী ও শিশুদের সাহায্য করার জন্য কাজ করে।
২০২৩ সালে তিনি তার নিজস্ব রেকর্ড লেবেল বিচোটা চালু করেন।
ব্রিটিশ বাজারের সম্ভাবনা
ক্যারোল জি যদিও যুক্তরাজ্যে এখনো তেমন জনপ্রিয় নন। তবে বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে, তিনি খুব শীঘ্রই সেখানে সাফল্য পাবেন। এ বিষয়ে আমাজনের রোকিও গেরেরো বলেন, ‘এটা সময়ের ব্যাপার মাত্র’।
ক্যারোল জি বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সফল এবং প্রভাবশালী লাতিন সঙ্গীতশিল্পী। যার জীবনসংগ্রাম থেকে সাফল্যের গল্প অনুপ্রেরণাদায়ক।
ঊষার আলো-এসএ