UsharAlo logo
মঙ্গলবার, ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের স্বপ্ন দুয়ার খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্প

koushikkln
আগস্ট ৩১, ২০২২ ১০:৫২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বিমল সাহা: ভারত সরকারের অর্থায়নে এলওসির মাধ্যমে খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ। ইতোমধ্যে রেল সেতুর কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। বাকী শুধু লাইন স্থাপন। রেল সেতুটি হস্তান্তরের জন্য রেলওয়ে মন্ত্রনালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পুরো প্রকল্পের ৯০ শতাংশের বেশি কাজ শেষ হয়েছে। ফলে নতুন করে স্বপ্ন দেখছে দক্ষিণ-পশ্চিামঞ্চলের মানুষ। এই প্রকল্প পুরোপুরি বদলে দিতে পারে এই জনপদকে।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোংলা বন্দর এক নতুন যুগের সূচনা করতে যাচ্ছে। রেল যোগাযোগ এই বন্দরকে যুগোপযোগী করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নতুন মাত্রা সংযোজন করেছে। স্থল ও নৌপথ ছাড়াও বিকল্প রূট থাকায় মোংলা বন্দর তথা এ অঞ্চলের মানুষের জন্য এই প্রকল্প এক নতুন আশার হাতছানি। সম্প্রতি সাংবাদিকদের এই প্রকল্পের অগ্রগতি জানানো হয়েছে।
সোমবার (২৯ আগস্ট) সাংবাদিকদের খুলনা-মোংলা রেল ব্রীজ এলাকা ঘুরে দেখান প্রকল্প ম্যানেজার অমরোতোশ কুমার ঝা। প্রকল্পের নানা বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, খর¯্রােতা রূপসা নদীতে স্প্যান স্থাপন ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়াও নানা রকম বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। সকল কিছু মোকাবেলা করেই সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে সেতুর কাজ। তিনি আরও বলেন, সেতুটি রক্ষনাবেক্ষনের দায়ীত্ব বাংলাদেশ রেলওয়ের। আমরা সেতুটি বুঝিয়ে দিতে তাদের চিঠি দিয়েছি। আশা করছি আগামী ১শ বছরেও এই সেতুর কিছুই হবে না।

ছবি: রেল সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়েছে, এখন বাকী লাইন স্থাপনের কাজ।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, রেললাইনের শেষে মোংলা পোর্ট থাকায় রেলপথে পণ্য আনা নেওয়া আরও সহজ হবে। নদী পথে শুধু ভারত নয় নেপাল ও ভুটান থেকে বিভিন্ন পণ্য মোংলা হয়ে এই রেল সেতু দিয়ে যাতায়াত করবে। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমবে। সেইসাথে এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটবে।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্পটি রূপসা সেতু বাদেও খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত রেললাইন এবং টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিংয়েল কাজ চলমান রয়েছে। ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে ৬৫ কিলোমিটার রেলপথ বসেছে। এছাড়া ৩১টি ছোট ব্রিজ ও ১১০টি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। খুলনার ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত ৮টি স্টেশন নির্মাণ কাজ শেষ। জুলাই মাস পর্যন্ত প্রকল্পের কাজে অগ্রগতি ৯৩ শতাংশ। ভারত সরকারের রেয়াতযোগ্য লাইন অফ ক্রেডিট (এলওসি) এর অধীনে বাস্তবায়তি হচ্ছে এই প্রকল্প। যার একটি অংশ রূপসা রেল সেতু নির্মাণ কাজ গত ২৫ জুন সম্পন্ন হয়েছে। ভারতীয় ইপিসি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এলএন্ডটি এই ৫.১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রডগেজ সিঙ্গেল-ট্রাক রূপসা রেল সেতু যা খুলনাকে মোংলা বন্দরের সাথে সংযুক্ত করেছে। চলতি সনের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানোতে প্রকল্পের মোট ব্যয় ১৩১৬ কোট ৮০ লাখ টাকা। ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর রূপসা রেল সেতুর পাইলিংয়েল কাজ শুরু হয়। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিন ২৫ জুন সপ্তম ও শেষ স্প্যানটি বসানো হয় রেল সেতুতে। রেলসেতুর ভায়াডাক্টের ৮৫৬টি পাইলের সব’কটিই বসানো হয়েছে। মূল সেতুর পাইল ৭২টি, পাইল ক্যাপ ৮টি, বিয়ারিং ৩২টি। রেল সেতুর ওপরিভাগ তৈরি করা হয়েছে স্টিলের গার্ডার এবং আরসিসি ডেকের সমন্বয়ে।
রেল দপ্তরের কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খুলনা-মোংলা বন্দর রেল সেতুটি এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলিকেও বন্দরটি ব্যবহার করার এবং উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্য বৃদ্ধির সুযোগ দেবে। পণ্য পরিবহণে ব্যাপক সুবিধা সৃষ্টি করবে। মংলা বন্দরের সাথে এই সহজ ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এই অঞ্চলের কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য অনায়াসেই স্থানীয় বাজারগুলোতে ব্যবসা করার সুযোগ পাবে। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশিষ্ট স্থানগুলিতে পর্যটনকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, এঅঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের এক নতুন সুযোগ খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্প। ভারত আমাদের বন্ধু দেশ। তাদের সহযোগীতায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় ধন্যবাদ জানাই। এই প্রকল্প আঞ্চলিক ব্যবসা প্রসারের পাশাপাশি মোংলা বন্দরকে আরও যুগোপযোগি করে তুলবে। তিনি আরও বলেন, অনায়াসে পন্য পরিবহন সুবিধা থাকায় দেশ-বিদেশের ব্যবসায়ীগণ এই বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হবেন। হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। ফলে দক্ষিণ-পশ্চিামাঞ্চলের মানুষের ভাগ্যদুয়ার খুলে দেবে এই প্রকল্প।

ঊআ-বিএস