UsharAlo logo
বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশে বেড়েছে তুচ্ছ কারণে খুন

usharalodesk
জুন ১৪, ২০২১ ৭:৩০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো ডেস্ক : দেশে হঠাৎ করেই বেড়েছে খুনের ঘটনা। তুচ্ছ ঘটনায়ই খুন করা হচ্ছে বীভৎসভাবে। গুম করতে খন্ডবিখন্ড করা হচ্ছে লাশ। আবার আগুনে পুড়িয়েও হত্যার চেষ্টা হচ্ছে। পারিবারিক দ্বন্দ্ব, আর্থিক সংকটসহ নানা কারণে ঘটছে এসব খুন। একের পর এক নৃশংস খুনের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে জনমনে। যদিও চাঞ্চল্যকর কয়েকটি ঘটনার ক্লু বের করতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর পরও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কমছে না। সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনা বিশ্লেষণে নৃশংসতার চিত্র ফুটে ওঠে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (ডিবি-উত্তর) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘তুচ্ছ ঘটনায় খুন-খারাবি বেশি পাওয়া যাচ্ছে পারিবারিক দ্বন্দ্ব এবং দাম্পত্য কলহের জেরে। এ ছাড়া মাদকাসক্ত ও একাধিক বিয়ের কারণেও বাড়ছে খুনের ঘটনাগুলো।’ ডিএমপির তথ্যমতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় সরকারের জারি করা বিধিনিষেধের মধ্যেই গত এক মাসে রাজধানীতে ১৮ খুন ও ৩৭ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের মে পর্যন্ত সারা দেশে ২৫৫ শিশু খুন হয়েছে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ১০৭টি। খুন হওয়া শিশুর মধ্যে ৬০ জনের বয়স ছয় বছরের নিচে এবং সাত থেকে ১২ বছরের মধ্যে ৬৭ শিশু। পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বলেন, ‘করোনাপ্রসূত আর্থিক ও মনস্তাত্ত্বিক চাপসহ পারিবারিক ও সামাজিক নানাবিধ প্রভাবকের কারণে মানুষের স্বাভাবিক এবং অপরাধ আচরণে পরিবর্তন আসতে পারে। এসব ক্ষেত্রে অপরাধের সংখ্যায় নয়, প্রকৃতি ও ধরনে পরিবর্তন বেশি লক্ষ্য করা যায়। তবে কারণ যা-ই হোক, প্রতিটি অপরাধের ক্ষেত্রে দ্রুততম সময়ে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করছে পুলিশ।’ বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক থাকায় স্ত্রী জোবেদা খাতুনকে (২৮) ঘুমন্ত অবস্থায় কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন আবুল কাশেম। এ ঘটনায় আবুল কাশেম গতকাল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ১০ জুন রাতে রাজধানীর ভাটারায় ছোলমাইদের নামাপাড়ায় ভাড়া বাসায় জোবেদাকে খুন করা হয়। একই দিন সন্ধ্যায় গুলশানের নর্দায় নিকিতা আক্তার (৪০) খুনের ঘটনায় তার ভাতিজি জেসমিন আক্তার রুপাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ১১ জুন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন রুপা। থাপ্পড় মারার জেরে ফুফুকে হত্যা করেন বলে জানিয়েছেন তিনি। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন কথায় কথায় খুনোখুনির পেছনে পরকীয়া, জমিসংক্রান্ত বিরোধ, অসহিষ্ণুতা, অতিমাত্রায় ক্ষোভ, মাদকের অর্থ জোগাড়, ইন্টারনেটের অপব্যবহার, রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয় কাজ করছে। মানুষের মাঝে দিন দিন মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে নিষ্ঠুরতা। গত ৪ মার্চ গাজীপুরের জয়দেবপুরে দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে কলহের জেরে স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ সাত টুকরো করেন জুয়েল আহমেদ। ১৬ মে রাজধানীর পল্লবীতে শাহীন উদ্দিন নামে এক যুবককে কুপিয়ে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়। জমিসংক্রান্ত পূর্বশত্রুতার জেরে তাকে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। এ ঘটনায় সাবেক এমপি আউয়ালসহ কয়েকজন আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২০ মে দক্ষিণখানে মসজিদের সেপটিক ট্যাংক থেকে পোশাককর্মী আজহারুলের সাত টুকরো লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই মসজিদের ইমাম আবদুর রহমান ও আজহারের স্ত্রী আসমা আক্তার আদালতে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। ২১ মে বরিশালে সবুজ নামে এক শিশুকে হত্যা করে লাশ খালে ফেলে দেয়া হয়। ২৭ মে রংপুরের মিঠাপুকুরে প্রতিবেশীর ঘরের মেঝে খুঁড়ে রহিমা খাতুন নামে এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। আত্মীয় এক যুবক মেয়েটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করে মাটিতে পুঁতে রাখে বলে জানা যায়। একই দিন দিনাজপুরের পার্বতীপুরে পাঁচ বছরের শিশু হাসিকে গলা টিপে হত্যার পর স্বজনদের লাশ উদ্ধার করতে বলেন মা রত্না বেগম। ৩০ মে রাজধানীর বনানীতে ছয় টুকরো লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত ময়না মিয়া অটোরিকশাচালক। তার প্রথম স্ত্রী ফাতেমা খাতুন পুলিশের কাছে হত্যার কথা স্বীকারও করেছেন। ৩১ মে রাজধানীর কলাবাগান থেকে গ্রিনলাইফ হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের চিকিৎসক ডা. কাজী সাবিরা রহমান লিপির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, তাকে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। এর আগে ১৬ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাফিজ নিজের গলায় আঘাত করে মারা যান। এ ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে তিন বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রকে এলএসডি নামের মাদকসহ গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। (ঊষার আলো-এমএনএস)