UsharAlo logo
বৃহস্পতিবার, ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নির্বাচন পরবর্তি সহিংসতায় বাগেরহাটে ৩২ জন আহত

usharalodesk
সেপ্টেম্বর ২২, ২০২১ ১:০২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বাগেরহাট প্রতিনিধি : দলীয় প্রতিকে প্রথম ধাপে হয়ে যাওয়া ইউপি নির্বাচন পরবর্তি সময়ে বাগেরহাটে সহিংসতা শুরু হয়েছে। এবার নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত অংশ নেয়নি এবং মাঠেও নামেনি। ফলে বাগেরহাটের প্রেক্ষাপটে স্থানীয় সরকার নির্বাচন পরবর্ত্তিতে ক্ষমতাসিন সরকারি দল আওয়ামী লীগের মধ্যেই এ সহিংসতা শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।

গত সোমবার নির্বাচন হওয়ার পর থেকে বাগেরহাটের শুধূ শরণখোলা উপজেলায়ই সহিংসতায় কমপক্ষে ৩০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতদের মধ্যে ১৫ জন শরনখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং নারীসহ ৫ জনকে খুলনা মেডিকেলল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে বিজয়ী ও পরাজিত ইউপি সদস্যের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নে পরাজিত প্রার্থীর কর্মীদের দোকান ভাংচুরেরও অভিযোগ করেছেন তিন প্রার্থী।

বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে শরণখোলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দেয়া তথ্যমতে ২০ জন এখানে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়া, বিভিন্ন এলাকায় আরো কমপক্ষে ১০জন আহত হয়ে বাড়িতে রয়েছেন। তারা প্রতিপক্ষের ভয়ে হাসপাতালে আসতে পারছে না বলে ভুক্তভোগিদের অভিযোগে জানা গেছে।

শরনেখালা উপজেলার বগী, চালিতাবুনিয়া, দক্ষিণ সাউথখালী, বকুলতলা, দক্ষিণ রাজাপুর, গোলবুনিয়া ও লাকুড়তলা এলাকায় এসব হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা হয়েছে বলে আহত ও ক্ষতিগ্রস্থরা জানান। এসব এলাকার মধ্যে সাউথখালী ইউনিয়নের বগী, চালিতাবুনিয়া ও বকুলতলা ওয়ার্ডে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল বলে জানা গেছে।

সাউথখালী ইউনিয়নের ৮নং চালিতাবুনিয়া ওয়ার্ডের বিজয়ী প্রার্থী জাহাঙ্গীর খলিফা জানান, ফলাফল ঘোষনার পর রাতে যে যার বাড়ি যাওয়ার পথে পরাজিত প্রার্থী জাফর তালুকদারের কর্মীরা তার কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এতে ৬ জন আহত হন। এদের মধ্যে গুরুতর আহত সাইফুল ইসলাম রুবেল (৪১) ও মনির খানকে (৩৫) খুলনা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। বাকিরা শরণখোলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এ ব্যাপারে, প্রতিপক্ষের জাফর তালুকদার তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মেম্বর জাহাঙ্গীর খলিফার লোকজনরাই আমার কর্মীদের মেরে আহত করেছে। সুলতান হাওলাদারের হাত ভেঙে গেছে। কিন্তু তাদের ভয়ে হাসপাতালে নিতে পারছি না। চালিতাবুনিয়া বাজারে আমার ৩ কর্মীর দোকান ভাঙচুর করেছে।

৭ নম্বর বগী ওয়ার্ডের পরাজতি প্রার্থী হানিফ মুন্সির অভিযোগ, বিজয়ী মেম্বর রিয়াদুল পঞ্চায়েত ও তার কর্মীদের ভয়ে জাহঙ্গীরের কর্মীরা এক প্রকার ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে। তাদের হামলায় আলী আজগর (৪৮) আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তার কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে। তার কর্মী আবু সালেহর মাছের আড়ত ভাঙচুর করেছে রিয়াদুলের লোকেরা। তবে, রিয়াদুল পঞ্চায়েতের ফোন বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

দুই নম্বর বকুলতলা ওয়ার্ডের পরাজিত প্রার্থী মো. শহিদুল ইসলাম খান জানান, বিজয়ী দেলোয়ার হোসেন খলিলের লোকেরা তার ৩ কর্মীকে মেরে আহত করেছে। এর মধ্যে রাজু মৃধাকে (২৪) খুলনা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া, ৩ কর্মীর দোকান ভাঙচুর করেছে সন্ত্রাসিরা।

দোকানপাট ভাঙচুরের অভিযোগের সঠিক নয় দাবি করে মেম্বর দেলোয়ার হোসেন খলিল বলেন, দুই পক্ষের কর্মীদের মধ্যে একটু ঝামেলা হয়েছে। পরবর্তীতে এ ধরণের ঘটনা যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে আমার কর্মীদের সতর্ক করা হয়েছে।

জেলার চিতলমারি উপজেলার হিজলা ইউনিয়নের নির্বাচিত নাইম মেম্বরের লোকেরা মঙ্গলবার বিকেলে স্থানীয় জিয়া সেখ(৩২) নামের একজন মুদিদোকানদার কে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আহত করেছে। তাকে চিতলমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্ত্তি করা হয়েছে। একই উপজেলার পাটর পাড়া এলাকায় নজরুল তালুকদার (৪২) নামের একজন কে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। এছাড়া কলাতলা ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্টে নির্বাচন পরবর্ত্তি মারমুখী অবস্থা বিরাজ করছে বলে স্থানীয়রা জানান।

অপরদিকে, মোড়েলগঞ্জ উপজেলার পুটিখালি ইউনিয়নে নৌকা প্রতিক নিয়ে আব্দুর রাজ্জাক নির্বাচিত হওয়ার পর তার ছোটভাই উপজেলা জাতীয়তাবাদি যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক চিহ্নিত সন্ত্রাসি আলী আজিম বাবুল তার বাহিনী সহযোগিদের নিয়ে এলাকায় হুমকী-ধামকি অব্যাহত রেখেছে। এমন অভিযোগ জানিয়ে পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহাবুব শিকদার বলেন, বাবুল বাহিনীর হুমকী-ধামকিতে আমার কর্মী-সমর্থকরা ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে। ওই সন্ত্রাসিদের কারনে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের এলাকা ছেড়ে বাগেরহাট জেলা সদরে আশ্রয় নিয়েছেন।

মঙ্গলেরহাট এলাকায় মুদিদোকানদার নাসির হাওলাদারকে প্রাননাশের হুমকী দিয়ে তার দোকান বন্ধ করে দিয়েছে বাবুল বাহিনী। শরণখোলা থানার ওসি মোঃ সাইদুর রহমান জানান, নির্বাচন পরবর্ত্তি টুকটাক সংঘর্ষের খবর শোনা গেছে। এখন পর্যন্ত থানায় কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ করেনি। সাউথখালী ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকা একটু ঝুঁকিপূর্ণ মনে হওয়ায় সেখানে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন ) মোঃ আসাদুজ্জামান বুধবার সকালে বলেন, নির্বাচনে শান্তি-শৃংখলা বজায়ে ছিল। এখন নির্বাচন পরবর্ত্তি কোন অপ্রিতিকর ঘটনা ঘটতে দেয়া হবে। বিচ্ছিন্ন ঘটনার খবর পেয়ে গোটা জেলা ব্যাপী পুলিশ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। কোন ধরনের অপরাধ মুলক ঘটনা ঘটতে দেয়া হবেনা।

(ঊষার আলো-আরএম)