UsharAlo logo
শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাইকগাছায় ইয়াসের প্রভাবে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ও উপচে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত; ক্ষতিগ্রস্থ ২ হাজার পরিবার

usharalodesk
মে ২৬, ২০২১ ৮:৫১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মোঃ আব্দুল আজিজ, পাইকগাছা : পাইকগাছায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এর প্রভাবে ওয়াপদার দূর্বল বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ও উপচে উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বুধবার (২৬ মে) বেলা ১১/১২টার দিকে ভরা পূর্ণিমার জোয়ারে অসংখ্য স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে যায়। এ ছাড়া বাঁধ উপচে বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে যায়। ওয়াপদার বাইরের বেশিরভাগ চিংড়ি ঘের এবং ভিতরের অসংখ্য ঘের তলিয়ে কোটি-কোটি টাকার মৎস্য ভেসে যায়। বিনষ্ট হয় কৃষি ফসলসহ ঘর-বাড়ি ও রাস্তা ঘাট। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ২২ হাজার পরিবার। সোলাদানা বাজার ও পৌর বাজার তলিয়ে গিয়ে ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষের চরম ভোগান্তি হয়। জনপ্রতিনিধি, আনসার, প্রকল্প শ্রমিক, স্বেচ্ছাসেবকসহ এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁধ মেরামতের কাজ করেছে। বাঁধ মেরামতসহ ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। বুধবার (২৬ মে) দুপুরের দিকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস উপকূলে আঘাত হানতে পারে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বার্তায় এমন আবাস দেয়া হয়। শেষ মুহূর্তে বলা হয় ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশের উপকূলে তেমন প্রভাব নাও ফেলতে পারে। তবে ভরা পূর্ণিমা হওয়ায় জলোচ্ছাসের সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মঙ্গলবার (২৫ মে) রাত থেকে বুধবার (২৬ মে) দিনভর এলাকায় দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত হয়। আবহাওয়ার বার্তা অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় এলাকায় মূল আঘাত না হানলেও এর প্রভাবে এলাকার নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট পানি বৃদ্ধি পায়। এর ফলে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে জোয়ারের অতিরিক্ত পানিতে বিভিন্ন এলাকার বাঁধ ভেঙ্গে ও উপচে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর জানান, শহর রক্ষা বাঁধ উপচে পৌর বাজারের কয়েকটি মার্কেটের সড়ক তলিয়ে গিয়ে পৌরভবন পর্যন্ত পানি চলে আসে। এতে ব্যবসায়ী সহ সাধারণ মানুষের চরম ভোগান্তি হয়। অনির্বাণ লাইব্রেরীর সাধারণ সম্পাদক প্রভাত দেবনাথ জানান, হরিঢালী ইউনিয়নের মাহমুদকাটীর মালোপাড়া এলাকার বাঁধ ভেঙ্গে এলাকার অনেকাংশ তলিয়ে যায়। আনসার ও ভিডিপি প্রশিক্ষক আলতাপ হোসেন মুকুল জানান, কপিলমুনি ইউনিয়নের আগড়ঘাটা বাজার সংলগ্ন পদ্মপুকুর এলাকার বাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যায়।

ইউপি চেয়ারম্যান চিত্তরঞ্জন মন্ডল জানান, লতা ইউনিয়নের পশ্চিম লতা, ধলাই গেটসহ বিভিন্ন এলাকার বাঁধ ভেঙ্গে ও উপচে বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে মৎস্য ঘেরসহ রাস্তা ঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শিক্ষক সুকৃতি মোহন সরকার জানান, দেলুটি ইউনিয়নের জকারহুলা, মধুখালী, চকরি-বকরি মুনকিয়া-দিঘলিয়া ও দেলুটির পূর্বপাশসহ অনেক এলাকার বাঁধ ভেঙ্গে ও উপচে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য আব্দুল মান্নান গাজী জানান, সোলাদানা ইউনিয়নের সোলাদানা বাজার, ভাঙ্গাড়িয়ার পরিমল মাস্টারের বাড়ির সামনে ১ কিলোমিটার, পাটকেলপোতা স্লুইচ গেটের পাশে, মিস্ত্রীপাড়া, হরিখালী, পারিশামারী, নুনিয়াপাড়া, সোলাদানা, পতন, বেতবুনিয়া ও হরিখালী আবাসনসহ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৪টি আবাসনের ৪শ’ পরিবার। ইউপি চেয়ারম্যান কেএম আরিফুজ্জামান তুহিন জানান, লস্কর ইউনিয়নের আলমতলা হাটের ওপারে, কড়ুলিয়া আনিচের ঘের হতে শাহআলম মেম্বরের বাড়ি পর্যন্ত, বাইনতলা, লস্কর উত্তর ওয়াপদা, পশ্চিম বিলের মান্নানের গেট, কড়ুলিয়া বিশুর বাড়ি হতে শিববাটী ব্রীজ পর্যন্ত এবং স্মরণখালীর ত্রিনাথ বাছাড়ের বাড়ির সামনের গেট ও ভড়েঙ্গা গেট ভেঙ্গে এবং বাঁধ উপচে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। আমি নিজেসহ এলাকাবাসী বাঁধ মেরামতের কাজ করেছি। ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ গোলদার জানান, রাড়ুলী ইউনিয়নের তোড়াডাঙ্গা ও ভড়বুড়িয়া এবং মালোপাড়াসহ কয়েকটি স্থানের বাঁধ ভেঙ্গে এবং উপচে এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি হয়। প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম কেরু জানান, গড়ইখালী ইউনিয়নের আবাসনে অনেক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া কুমখালী ও খুদখালীর বাঁধ আমরা সবাই মিলে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে মেরামত করি।

গোপালপুর গ্রামের চিংড়ি চাষী মোহাম্মদ আলী গাজী জানান, আলোকদ্বীপ মৌজায় ৪৫ বিঘার একটি চিংড়ি ঘের রয়েছে। আমার ঘেরসহ ওই এলাকার সকল চিংড়ি ঘের তলিয়ে গিয়ে একাকার হয়ে গেছে। উপজেলা চিংড়ি চাষী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া রিপন জানান, ওয়াপদার বাইরে অসংখ্য চিংড়ি ঘের রয়েছে। নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রথমেই ওয়াপদার বাইরের বেশিরভাগ চিংড়ি ঘের তলিয়ে গিয়ে সমস্ত মাছ ভেসে যায়। এছাড়া বাঁধ ভেঙ্গে এবং উপচে ওয়াপদার ভিতরের অনেক চিংড়ি ঘের তলিয়ে যায়। এতে কোটি-কোটি টাকার মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস জানান, প্লাবিত এলাকার বিভিন্ন ইউনিয়নের আশ্রয় কেন্দ্রে অনেক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের পক্ষ থেকে আশ্রয় নেয়া এসব মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। স্থানীয় সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু নির্বাচনী এলাকায় উপস্থিত থেকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সার্বিক তদারকি করেছেন। ঘূর্ণিঝড় মূল আঘাত না হানলেও এর প্রভাবে অনেক এলাকার বাঁধ ভেঙ্গে এবং উপচে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করে স্থানীয় চেয়ারম্যান, পুলিশ, আনসার, স্বেচ্ছাসেবক ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ মেরামত করার চেষ্টা করেছি। আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি সঠিকভাবে এখনো নিরূপণ করতে না পারলেও অসংখ্য চিংড়ি ঘের, ঘর-বাড়ি ও রাস্তা-ঘাট তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহায়তা করা হবে বলে উপজেলা প্রশাসনের এ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

(ঊষার আলো-এমএনএস)