UsharAlo logo
মঙ্গলবার, ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বকেয়ার দাবিতে ফের আন্দোলনে খুলনার বেসরকারি জুট মিল শ্রমিকরা

koushikkln
ডিসেম্বর ৬, ২০২১ ১১:০৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মো. আশিকুর রহমান : শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ না করেই খুলনার অধিকাংশ বেসরকারি জুট মিল বছরের পর বছর বন্ধ রাখা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ব্যাংক থেকে শত কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা ভিন্নখাতে ব্যবহার করতে এই কৌশলী ভূমিকা নিয়েছেন মিল মালিকরা। শ্রমিকদের দাবি, ব্যাংক ঋণের টাকা পরিশোধ বা মিলগুলোকে চালু করার আদৌ কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। এদিকে মিল মালিকদের কাছে শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রায় ১’শ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। খুলনার বেসরকারি জুট মিলের বকেয়া ১শ’ কোটি টাকা পাওনার দাবিতে ফুসে উঠেছে শ্রমিকরা।

তাদের পাওনাদী আদায়ের লক্ষে গেল নভেম্বর মাস জুড়ে স্ব-স্ব জুট মিল গেটের সম্মুখে গণ-অনশণ পালন করে শ্রমিকরা। তবুও কোন সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়নি তাদের বকেয়া পরিশোধের। যে কারণে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচির অংশ হিসাবে আগামী ৮ ডিসেম্বর (বুধবার) সকাল ১০ টায় খুলনা জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনে বেসরকারী জুট মিল শ্রমিকদের দাবি আদায়ে অনশন কর্মসূচি পালন করবেন শ্রমিকরা বলে জানা গেছে।

মিল শ্রমিকরা জানান, খুলনা অঞ্চলে বেসরকারি সোনালী জুট মিলস, এ্যাজাক্স জুট মিলস, মহসেন জুট মিলস, শিরোমণি ট্রান্সওশেন ফাইবার্স প্রোসেসার্স লিমিটেড, জুট স্পিনার্স এ সকল জুট মিলের মালিকদের কোটি কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ রয়েছে।

জুট স্পিনার্সের শ্রমিক মো. ইসমাইল বলেন, মিল চালু ও বকেয়া পাওনার দাবিতে বেশ কিছুদিন আন্দোলন করতে করতে নেতারা হঠাৎ করেই সিবিএ নেতারা আন্দোলন বন্ধ করে দিয়েছে। মিলে কাজ করার আশা আমরা ছেড়ে দিয়েছি। এখন আমরা শুধু বকেয়া পাওনা টাকা চাই। সোনালী জুট মিলের শ্রমিক কামাল মিয়া বলেন, মিলে মজুরির প্রায় আড়াই লাখ টাকা বকেয়া। মিল বন্ধ, টাকা দেয় না- তাই রিক্সা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছি।

আফিল জুট মিল : আটরা শিল্প এলাকার আফিল জুট মিলটি ২০১৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী বন্ধ হয়, মিল মালিকের কাছে প্রায় ১৯ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। গত নভেম্বর মাস থেকে মিলের শ্রমিকদের চুড়ান্ত পাওনা পরিশোধ করা শুরু হয়েছে । জানা যায়, ৫ টি মিলের প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক পরিবার মানবেতর দিনযাপন করছে। টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে মৃত্যুকোলে হেলে পড়েছে অনেকে। এদিকে বকেয়া মজুরি পরিশোধ ও মিল চালুর দাবিতে আবারও ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে বেসরকারী পাট, সুতা, বস্ত্রকল শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশন নেতৃবৃন্দ।
মহসেন জুট মিল : বেসরকারি মহসেন জুট মিল ১৯৭২ সালে সরকারিকরণ হলেও ১৯৮৩ সালে তা পুনরায় ব্যক্তি মালিকানায় ছেড়ে দেওয়া হয়। ২০১৪ সালে ১৭ জুলাই মিলের স্থায়ী এবং অস্থায়ী ১২শ’ শ্রমিক-কর্মচারীকে ছাঁটাই করা হয়। মিল কর্তৃপক্ষের কাছে শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা রয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। মিলটি রূপালী ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিলো প্রায় ৩০ কোটি টাকা।

জুট স্পিনার্স মিল : জুট স্পিনার্স মিল ১৯৮১ সালে যাত্রা শুরু করে। ২০১৬ সালে মিলের ১৭শ’শ্রমিক-কর্মচারীকে নোটিশ ছাড়াই বন্ধ করে দেয় মিলটির মালিক মোঃ সামছুজ্জোহা। এখানে শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া পাওনা প্রায় ৮ কোটি টাকা। জনতা ব্যাংকের কাছে মিলটির প্রায় ২৯ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে।
সোনালী-এ্যাজাক্স জুট মিল : মীরেরডাঙ্গা শিল্পাঞ্চলে বন্ধকৃত এ্যাজাক্স জুট মিলে দুই হাজার শ্রমিক কাজ করতো সব মিলিয়ে শ্রমিক কর্মচারীদের পাওনা ৩২ কোটি টাকা। মিলটি সোনালী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের কাছ থেকে প্রায় ১ শ” কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এদিকে খুলনা অঞ্চলে বেসরকারি জুট মিলগুলোর মধ্যে সব থেকে বেশি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে সোনালী জুট মিলস। মিলটিতে স্থায়ী ও বদলি মিলে প্রায় ৪৭০০ শ্রমিক কাজ করতো বর্তমানে মিল মালিকের কাছে শ্রমিক কর্মচারীদের প্রায় ৩০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।মিল কর্তৃপক্ষের কাছে উত্তরা ও সোনালী ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংকের প্রায় ৪০০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।

বেসরকারি পাট, সূতা, বস্ত্রকল শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শেখ আমজাদ হোসেন বলেন, বেসরকারি জুট মিলের মালিকরা ব্যাংক থেকে শত কোটি টাকা ঋণ নিয়ে মিলগুলোকে বন্ধ করে রেখেছে। পাশাপাশি শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধ না করায় হাজার হাজার শ্রমিকের পরিবার মানবেতর দিনযাপন করছে। আমরা ইতিমধ্যে একাধিকবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ত্রি-পাক্ষিয় বৈঠকে বসেছি। আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়েছে কিন্তু ১ টি সিদ্ধান্তও মালিক পক্ষ মানেনি। ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকবো এর বিকল্প কোন পথ খোলা নেই। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া এ আন্দোলনে কোনো ফলপ্রসূ সমাধান মিলবেনা বলে জানা এ নেতা।

খুলনা বিভাগীয় শ্রম পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন বেসরকারী জুট মিলের মালিকেরা ব্যাংক থেকে মিল চালু করার কথা বলে মোটা অংকের লোন নিয়ে মিল না চালিয়ে অন্যখাতে অর্থব্যায় করছে। সে সকল মালিকদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। অনেক মিল মালিকের বিরুদ্ধে আমি নিজে বাদি হয়ে শ্রম আদালতে মামলা দায়ের করেছি । বকেয়া পাওনাদী আদায়ে নভেম্বর মাসজুড়ে স্ব-স্ব মিলগেটে গণ-অনশনে নামে আন্দোলনরত শ্রমিক ও শ্রমিকনেতৃবৃন্দ। নতুন কর্মসূচির অংশ হিসাবে আগামী ৮ ডিসেম্বর (বুধবার) সকাল ১০ টায় খুলনা ডিসি অফিসের সামনে বেসরকারী জুট মিল শ্রমিকদের দাবি আদায়ে অনশন কর্মসূচি পালন করবেন শ্রমিকরা বলে জানিয়েছেন।