UsharAlo logo
শুক্রবার, ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাগেরহাটের মাটিতে গাছে গাছে ঝুলছে সৌদি মরুভূমির আজওয়া, মরিয়ম, সুকারি, আম্বার খেজুর

মাসুম হাওলাদার, বাগেরহাট, খুলনা 
জুলাই ৫, ২০২৩ ৭:১৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

                                                   দক্ষিণাঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার সম্ভাবনা

গাছে গাছে ঝুলছে আজওয়া, মরিয়ম, সুকারি, আম্বারসহ বাহারি জাতের সব খেজুর। থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা এসব খেজুর কোনটি লাল ও কোনটি হলুদ। আকার ভেদে কোনটি আবার গোল কোনটি লম্বা। রসালো মিষ্টি এ খেজুর বাগান গড়ে তুলেছেন বাগেরহাট জজ কোর্টের আইনজীবী মো. জাকির হোসেন। বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার সন্ন্যাসী হাজিপাড়া গ্রামের নিজের ১৫ বিঘা জমিতে গড়ে তোলা তার এই বাগানে রয়েছে প্রায় ৫ শতাধিক গাছ। এ বছর ফল ধরেছে ৮০টি গাছে। তিন বছর আগে রোপণ করা এ গাছ গুলোতে ফল ধরেছে ২৫ থেকে ৩০ কেজি পর্যন্ত।

এ্যাড. জাকির হোসেন বলেন, ২০১৪ সালে নিজের ১৫ বিঘা জমিতে নয়টি পুকুর খনন করে মাছ চাষ শুরু করি। সে সময় পুকুরের চারপাশ জুড়ে বিভিন্ন ফলজ গাছও রোপণ করি। কিন্তু লবণ পানির জন্য এসব গাছে ঠিকমতো ফল হচ্ছিল না। এসময় প্রচণ্ড লবণ পানির কারণে কারণে পুকুরে থাকা মাছও ভালো হচ্ছিল না। পরে ২০১৯ সালের প্রথম দিকে রামপাল সৌদি খেজুর বাগান নাম দিয়ে এই খেজুর চাষ শুরু করি। এসময় ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে ২০০ সৌদি খেজুরের চারা এনে রোপণ করি। পরবর্তীতে নরসিংদী থেকে আরও ১০০ চারা আনি। বর্তমানে আমার আজওয়া, মরিয়ম, সুকারি, আম্বার ও বাহি এই পাঁচ জাতের প্রায় ৫ শতাধিক গাছ রয়েছে। এর আগে গত বছর প্রায় ৫০টি গাছে ফল ধরেছিলো। এ বছর ৮০টি গাছে একযোগে ফলন এসেছে। আগামী বছর আমার বাগানে অন্তত ২শ থেকে ৩শ গাছে ফল আসবে বলে আশা করছি। ইতি মধ্যে বেশ কিছু ফল ব্যবসায়ী আমার সাথে যোগাযোগ করেছে খেজুর ক্রয় করার জন্য। গত বছর যে ফল ধরেছিলো, সেগুলো স্থানীয় বাসিন্দাসহ বাগান দেখতে আশা মানুষের মাঝে বিতরণ করেছি। এ বছরই প্রথম বাণিজ্যিক ভাবে খেজুর বিক্রি শুরু করেছি। এছাড়া আমার বাগাড় খেজুরের পাশাপাশি কয়েক প্রজাতির আম, আমড়া, মাল্টাসহ বেশ কিছু ফলের গাছ রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমার বাগানে কলম (অপশুট) এর চারা রয়েছে। কারও লাগলে দিতে পারবো। তবে সে ক্ষেত্রে দামামা একটু বেশি পরবে। কারণ আমার বাগানের গাছগুলো উন্নতমানের প্ররিক্ষিত জাত। আমিও অনেক বেশি টাকা ব্যয় করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গাছ গুলো সংগ্রহ করেছি। বাগান পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত আশরাফ শেখ বলেন, আমার এখানকার পানি প্রচণ্ড লবণ। এ কারণে গাছপালাও ঠিকমতো হতে চায় না। তবে আমার ডিপ টিউ বয়েল বসিয়ে তা থেকে মিষ্টি পানি গাছের গোড়ায় দি। এছাড়াও প্রতিটি গাছে বিশেষ যত্ন নিতে হয়।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের রামপাল উপজেলায় জাকির হোসেন নামের একজন আইনজীবী সৌদি খেজুর চাষে সফলতা পেয়েছেন। আমরা কৃষিবিভাগ তাকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। বিশেষ করে যখন ফল ধারণ করে, ফল যাতে ঝরে না পড়ে এছাড়া বিভিন্ন পোকামাকড়রে আক্রমণ ও রোগবালাইয়ের আক্রমণে কি ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে। এ বিষয়ে তার সাথে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে। শুধু তাই নয় জাকির হোসেন এর দেখাদেখি যে সকল কৃষক আগ্রহী হয়েছেন খেজুর চাষে তাদেরকেও বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সৌদি খেজুরের একটা সমস্যা হচ্ছে পুরুষ ও স্ত্রী গাছ আলাদা হয়। এ কারণে বীজ থেকে যে গাছগুলো তৈরি করা হয় তার অধিকাংশই ফল নাও ধরতে পারে। মূলত সাকারের মাধ্যমে এখান থেকে চারা সংগ্রহ করা হচ্ছে। আমরা আশা করছি এই যে সৌদি খেজুর চাষ করেছেন জাকির হোসেন। এটা যদি আমাদের আর দক্ষিণাঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা যায়, তাহলে নতুন অর্থকরী ফসল হিসেবে এই খেজুরের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে।