UsharAlo logo
বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিশ্বে প্রশংসার আসনে শেখ হাসিনা

usharalodesk
জুন ১, ২০২১ ১০:৫৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো ডেস্ক : করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা মোকাবেলা করেও বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে তাঁর ভূমিকা প্রশংসা কুড়াচ্ছে বিশ্বনেতাদের। চলমান করোনা মহামারীতেও বিশ্বদরবারে সরব উপস্থিতি রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। একই সঙ্গে উন্নত দেশগুলোর ভ্যাকসিন যুদ্ধের মধ্যেই বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন ধরনের ভ্যাকসিন সংগ্রহ ও প্রয়োগ তাক লাগিয়ে দিয়েছে অনেককেই। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় কেবল দেশের মধ্যেই উদ্যোগ নিয়ে থেমে থাকেননি, বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক উদ্যোগ নিয়েও তিনি প্রশংসিত হয়েছেন। পাশাপাশি বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের অধিকার আদায়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর একের পর এক বক্তব্য ও প্রস্তাব দৃষ্টি কেড়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের মতে, করোনাভাইরাস মহামারীতে সৃষ্ট নজিরবিহীন সংকট মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সামনে থেকে দৃঢ়তার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। এ দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের যে দায়বদ্ধতা আছে তার প্রতিও তিনি অবিচল এবং একই সঙ্গে অন্য অংশীদারদের কাছ থেকেও দায়িত্বপূর্ণ আচরণের প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, স্বাধীনতার আগে ও পরে বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক ধীশক্তি ও দূরদর্শিতার যোগ্য উত্তরাধিকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক কূটনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। শান্তিপূর্ণভাবে বিবাদ মীমাংসা, আঞ্চলিক সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশসমূহের নেতৃত্ব প্রদান, মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত লাখ-লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মানবিক কারণে আশ্রয় প্রদান- এ বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়তা ও দূরদর্শিতার পরিচয় বহন করে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে পৃথিবীর অনেক প্রখ্যাত নেতা এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেছেন। এখনো বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতেরা যখনই কোনো বিশ্বনেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন তখনই তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের প্রশংসা করছেন।
গত মাসের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নশীল মুসলিম দেশগুলোর জোট ডি-৮-এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আগামী দুই বছর তিনি এ পদে দায়িত্ব পালন করবেন। বাংলাদেশ, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও তুরস্কের সমন্বয়ে গঠিত ডি-৮-এ ১৯৯৯ সালেও এক দফায় সভাপতিত্ব করেছেন শেখ হাসিনা। এপ্রিলের শেষে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বিশ্বনেতাদের সামনে চার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আয়োজিত জলবায়ুবিষয়ক দুই দিনব্যাপী ‘লিডারস সামিটে’ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কার্বন নিঃসরণ কমানো, জলবায়ুর ক্ষতি প্রশমন ও পুনর্বাসনে বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলার ফান্ড নিশ্চিত করা এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির দিকে বেশি মনোযোগী হওয়ার কথা বলেন তিনি।
গত সেপ্টেম্বরে পৃথিবী ও মানব জাতির সুরক্ষায় জীববৈচিত্র্য রক্ষায় চারটি পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে অনুষ্ঠিত বায়োডাইভারসিটি সামিটে জীববৈচিত্র্য রক্ষার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কেবল অন্য প্রজাতি বিলুপ্তির কারণ হচ্ছি না, বর্তমান কর্মকান্ড পরিবর্তন না হলে প্রকৃতপক্ষে মানব জাতিই চূড়ান্ত বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাবে। তাই পৃথিবী ও আমাদের অস্তিত্ব রক্ষায় অবশ্যই পদক্ষেপ নিতে হবে।’ একই সময়ে ওয়ার্ল্ড উইমেন কনফারেন্সেও সোচ্চার ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ভার্চুয়ালি রাখা বক্তব্যে ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ৫০-৫০-এ উন্নীত করার অঙ্গীকারের পাশাপাশি নারীর সমতা, ক্ষমতায়ন ও অগ্রগতি নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অঙ্গীকার নবায়ন ও প্রচেষ্টা জোরদারেরও আহ্বান জানান তিনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছর বিশ্ব যখন করোনা মহামারীতে কাঁপছিল তখন করোনার ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের আন্তর্জাতিক উদ্যোগেও অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তখনই ‘গ্লোবাল সিটিজেন’ তহবিলে ৫০ হাজার মার্কিন ডলার দেয় বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সব সময়ই সাম্য, ন্যায় ও জাতীয় মালিকানার নীতিকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। তাই সবাই যেন ভ্যাকসিন পায বা যাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তারা যেন তা পায়, একজনও যেন বাদ না পড়ে তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি প্রয়াস নিয়েছেন। পাশাপাশি করোনাভাইরাসের অর্থনৈতিক বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য তহবিল গঠনের ক্ষেত্রেও উদ্যোগ নেন প্রধানমন্ত্রী। তখন ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে করোনা প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় বিশ্বকে পাঁচ দফা প্রস্তাব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লেখেন, ‘বিশ্ব এক অজানা এবং অদেখা শত্রুর বিরুদ্ধে আজ লড়াই করছে। এ শত্রুর কোনো সীমানাবোধ নেই, নেই কোনো শ্রেণিবোধ। সবচাইতে দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো আমাদের ব্যবস্থাপনার ত্রুটিগুলো দেখিয়ে দিচ্ছে এ শত্রু। এমন অবস্থায় বিচ্ছিন্ন হয়ে নয় বরং পরস্পরকে সহযোগিতার মাধ্যমে এ কভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হতে পারব আমরা।’ প্রায় এক বছর আগে বৈষম্য দূর করতে নতুন করে ভাবতে বলা শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখে নিজের সাফল্য দেখালেও বিশ্বের অনেক দেশ তা পারেনি। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানে ‘ফাইটিং সাইক্লোন্স অ্যান্ড করোনাভাইরাস : হাউ উই এভাকুয়েটেড ডিউরিং আ প্যানডেমিক’ শিরোনামে এক নিবন্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ সুপার-সাইক্লোন আম্ফান এবং কভিড-১৯-এর মতো দুটি বিপদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। আমরা অন্যদের একই রকম বিপদ মোকাবিলায় পাঠ দিতে পারি।’
প্রশংসায় ভারতীয় গণমাধ্যমঃ ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য প্রিন্টে প্রকাশিত এক কলামে বলা হয়েছে, ‘ক্রমাগত অগ্রসরমাণ অর্থনৈতিক সক্ষমতা নিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকার। এমনকি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত পাকিস্তানও এখন বাংলাদেশের এ অভাবনীয় সাফল্যের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।’ এতে বলা হয়, মহামারীর এ সংকটময় মুহূর্তে কভিড মোকাবিলায় ভারতকে ত্রাণ এবং শ্রীলঙ্কাকে ডলার সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক অগ্রগতি প্রদর্শন করছে। একই সঙ্গে একে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে মিত্রতা জোরদারে ব্যবহার করছে ঢাকা। ২০১৯ সালে ইস্টার সানডের সময় শ্রীলঙ্কায় সিরিজ বোমা হামলা ও তাতে শত শত মানুষের প্রাণহানির পর গভীর সংকটে পড়ে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি। এরপর মহামারী করোনাভাইরাস আঘাত হানার পর দেশটির অর্থনীতিতে বিপর্যয় দেখা দেয়। এ মহামারী দেশটির পর্যটন খাত লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। একই সঙ্গে ধুঁকতে শুরু করে অন্যান্য খাতও। এমন সময় পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। তাই বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছে শ্রীলঙ্কা। অন্যদিকে মহামারী করোনার দ্বিতীয় দফার প্রকোপে বিপর্যস্ত ভারতে যে ৪০টি দেশ নানাভাবে ত্রাণ সহায়তা পাঠিয়েছে তার একটি বাংলাদেশ। ১৮ মে ঢাকা ভারতকে বিভিন্ন অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ আর কভিড সুরক্ষা সরঞ্জামের ২ হাজার ৬৭২ বক্স হস্তান্তর করে। এর আগে ৬ মে ঢাকা করোনা চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ রেমডেসিভিরের ১০ হাজার ডোজ ভারতকে সহায়তা হিসেবে দেয়। বিশ্বব্যাংকে পাকিস্তানবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা আবিদ হাসান বলেছেন, ‘আগামীতেও যদি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এ হারে হতে থাকে তাহলে ২০৩০ সালে বাংলাদেশ ইকোনমিক পাওয়ার হাউসে পরিণত হবে। তখন পাকিস্তান যে বাংলাদেশের কাছে সাহায্যের জন্য হাত বাড়াবে সে সম্ভাবনা যথেষ্ট।’

(ঊষার আলো-এমএনএস)