UsharAlo logo
শনিবার, ১১ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর চাপ, সেবা প্রশ্নবিদ্ধ

usharalodesk
জুন ১৬, ২০২১ ৬:০৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মোঃ মেহেদী হাসান, মণিরামপুর : চলতি মাসের প্রথম থেকে যশোরের মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর চাপ বেড়েছে। প্রতিদিন গড়ে ২৫-২৬ জন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন এখানে। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন নিয়মিত ৩০০-৪০০ রোগী। গত কয়েকদিন আগেও যেখানে হাসপাতালের বেড খালি পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এখন করোনাভীতি উপেক্ষা করে সেখানে বেড ছাড়া ফ্লোরে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। হাসপাতালে আগত রোগীরা বেশিরভাগ জ্বর, শ্বাসকষ্ট, পেটব্যথা,বমি ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে রোগীরা এসব রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানাগেছে। তবে হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়লেও সেবাপ্রাপ্তি নিয়ে রয়েছে বরাবরই প্রশ্ন। হাসপাতালে ওষুধ থাকলেও চিকিৎসকরা কোম্পানির প্রতিনিধিদের খুশি রাখতে তাদের ওষুধ লিখছেন বলে অভিযোগ। যা কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন রোগীর স্বজনরা। এছাড়া হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীরা গ্যাসের ইনজেকশন বা সিরাপ, বমির বা ডায়রিয়ার সিরাপ এবং বহির্বিভাগে আগত রোগীরা গ্যাসের ভাল ওষুধ পাচ্ছেন না এমন অভিযোগ রোগীদের দীর্ঘদিনের। কয়েকদিন আগে বগুড়া থেকে ট্রাক ভর্তি ওষুধ এসেছে হাসপাতালে। তাতে গ্যাসের উচ্চ পাওয়ারের কোন ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল আসেনি বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। যদিও হাসপাতালের পক্ষে থেকে তিনলাখ গ্যাসের ওষুধের চাহিদা দেওয়া ছিল। মঙ্গলবার (১৫জুন) দুপুর ১২ টার দিকে জ্বর, বমি ও পায়খানায় আক্রান্ত ছেলে সাকিবকে (১০) মণিরামপুর হাসপাতালে ভর্তি করেছেন মাচনা ভূমিহীনপল্লীর বাসিন্দা ইয়াসমিন। ভর্তির সময় জরুরি বিভাগের চিকিৎসককে নিজের ওষুধ কেনার সামর্থ না থাকার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। তারপরও ভর্তির চিকিৎসাপত্রে চিকিৎসক হাসপাতালের দুই একটা ওষুধের সাথে জিম্যাক্স, ফেমোডিন, ইমিস্ট্যাট ও রেসিকা পাউডার লিখে দেন। যা কিনতে না পারায় আধঘন্টা বিনা চিকিৎসায় বেডে পড়ে ছিল সাকিব। পরে অবশ্য এই প্রতিবেদকের মাধ্যমে যাবতীয় ওষুধ বিনামূল্যে পেয়েছে সাবিক। ইয়াসমিন বলেন, স্বামী অসুস্থ। কাজে যেতে পারেন না। আমি পরের বাসায় কাজ করে সংসার চালাই। ছেলেরে হাসপাতালে আনার পর ডাক্তারকে বলিছি আমার টাকা নেই। তারপরও তিনি বাইরের ওষুধ লিখে দেছেন। আমি দোকানে যেয়ে বাকি চাইছি; পাইনি। আমার ছেলেরে বিনা চিকিৎসায় আধঘন্টা ফেলে রেখেছে। একই দিনে সকালে জ্বর, সর্দি ও কাঁশি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন খানপুর গ্রামের কলেজ ছাত্র রায়হান। তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে ২-৩ টা বড়ি দেছে। ভর্তি হওয়ার সাথে সাথে ৪৫০ টাকার ওষুধ কেনা লেগেছে। ইয়াসমিন ও তহুরারমত এমন অনেক অভিযোগ হাসপাতালে আসা রোগীদের। এদিকে বহির্বিভাগে চিকিৎসক দেখিয়ে হাসপাতালের ফার্মেসিতে শিশু মেয়ে লাবিবার চোখের ড্রপ আনতে গিয়ে না পেয়ে ফিরে এসেছেন রুনা খাতুন। তিনি বলেন, আমি গ্যাসের সমস্যার জন্য ও মেয়ের চোখের ড্রপ আনতে গেলে ওষুধ নেই বলে ফিরিয়ে দিয়েছে।
হাসপাতালের জরুরি ওয়ার্ডের চিকিৎসক উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ইফতেখার রসুল বলেন, জুনের প্রথম থেকে জ্বর, পেটেব্যাথা রোগীর চাপ বেড়েছে। প্রতিদিন গড়ে ২৫-২৬ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। অনেকে করোনার ভয়ে ভর্তি না হয়ে জরুরি বিভাগে দেখিয়ে চলে যাচ্ছেন। হাসপাতালের ভর্তি ওয়ার্ডের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স বন্দনা নন্দি ও নাজমুন নাহার নাজমা বলেন, হাসপাতালে বেশ কয়েকদিন ধরে রোগীর চাপ। বিশেষ করে সকালে রোগীর সাথে দেখা করতে স্বজনরা খুব ভিড় করছেন। ঠেকানো যাচ্ছে না। কারোমধ্যে করোনার ভীতি নেই। বন্দনা বলেন, ডাক্তার যেভাবে লেখেন সেভাবে আমরা ওষুধ দিই। অনেক ওষুধ রোগীরা পাচ্ছে। গ্যাসের বা বমির সিরাপ ইনজেকশন সাপ্লাই নেই। গরিব রোগীদের প্রয়োজনে আমরা কিনে রাখা ওষুধ দিচ্ছি।
হাসপাতালের স্টোরকিপার মহিতোষ কুমার বলেন, কয়েকদিন আগে নতুন ওষুধ এসেছে। বহির্বিভাগের জন্য এন্টাসিড ছাড়া গ্যাসের কোন ওষুধ আসেনি। ওষুধ যা এসেছে সার্ভে না হওয়ায় তা বিতরণ করা যাচ্ছে না। এদিকে, মণিরামপুরে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে দিনদিন। গত কয়েকদিনে এই অঞ্চলে ৫৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ড থাকলেও অধিকাংশ রোগী বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
মণিরামপুর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. অনুপ বসু বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে জ্বর, পেটেব্যাথা বা ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। রোগীদের জন্য নতুন করে কিছু ওষুধ এসেছে। আরো আসবে দ্রæত। ডাক্তার বসু বলেন, জিম্যাক্স, বমি বা গ্যাসের সিরাপ হাসপাতালে সাপ্লাই থাকেনা। রোগীর অবস্থা বুঝে ডাক্তাররা এসব ওষুধ লেখেন। গরিব রোগীদের আমরা সমাজসেবার মাধ্যমে বিনামূল্যে বাইরের ওষুধ দিই। রোগীদের অভিযোগের বিষয়গুলো নজরে নেওয়া হচ্ছে, বলেন এই কর্মকর্তা। এসব বিষয়ে জানতে একাধিকবার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শুভ্রারানী দেবনাথের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে জানাগেছে, কয়েকদিনের প্রশিণে তিনি ঢাকায় রয়েছেন।

(ঊষার আলো-আরএম)