UsharAlo logo
বুধবার, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২শ টাকা নিয়ে বিরোধে শামীমকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে হত্যা করা হয় 

usharalodesk
সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২১ ১:২০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো প্রতিবেদক : লবনচরায় ইজিবাইকের গ্যারেজ ম্যানেজার শামীম মোড়লকে হত্যা মামলার মূল আসামী সাবেক ম্যানেজার আরাফাত হোসেন (১৯) কে গ্রেফতার করেছে কেএমপির লবণচরা থানা পুলিশ। চাকরি হারানোসহ মাদক কেনার জন্য দেওয়া ২শ টাকা খরচ করে ফেলায় তর্কাতর্কির একপর্যায়ে মা বোন তুলে গালিগালাজ ও মারধরের জেরে শামীমকে গলায় গামছা পেচিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে দায় স্বীকার করে শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে মূল আসামী আরাফাত।

গ্রেফতারকৃত আসামী আরাফাত ওয়াজেদনগর (আলুতলা মৌজা) খুলনা টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের পশ্চিম পাশে জনৈক শাহীনের বাড়ীর কেয়ারটেকার আল আমিন সানার ছেলে ।

কেএমপির সূত্র জানায়, ১৬ সেপ্টেম্বর বিকাল সাড়ে ৩টায় ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোঃ আনোয়ার হোসেনের দিক-নির্দেশনায় অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) সোনালী সেনের তত্বাবধানে লবণচরা থানার অফিসার ইনচার্জ সমীর কুমার সরকারের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশেষ টিম অভিযান পরিচালনা করে আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির সাহায্যে লবণচরা মোহাম্মদনগর এলাকা থেকে আসামী আরাফাত হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে ও তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক মামলার আলামত একটি সিসি ক্যামেরার ডিভিআর HIK VISION ব্রান্ডের, ২টি মোবাইল ফোন ও নগদ ২১হাজার ৩শ ৭১ টাকা উদ্ধার পূর্বক জব্দ তালিকা মূলে জব্দ করা হয়েছে। আসামী আরাফাত ঘটনায় নিজেকে জড়িয়ে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা দিয়ে পুলিশের নিকট স্বীকারোক্তি প্রদান করেছে। তাকে আদালতে সোপর্দ করলে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক বিচারিক জবানবন্দি প্রদান করেছে।

উল্লেখ্য, লবণচরা থানার মামলা নং-১০, তারিখ-১৬/০৯/২০২১ খ্রিঃ, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোডের মামলার বাদী মুজিবর মোড়লের এজাহারের ভিত্তিতে আসামী মোঃ আরাফাত হোসেনকে গ্রেফতারপূর্বক জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আসামী স্বীকার করে যে, আসামী আরাফাত ও মৃত মোঃ শামীম (২০) খুলনা মেসার্স সোহেল এন্ড রিফাত এন্টারপ্রাইজ নামক প্রতিষ্ঠানে একই সাথে কাজ করতেন। আসামী আরাফাত হোসেন (১৯) বিগত ১ বছর যাবৎ মাসিক ৬ হাজার টাকা বেতনে মেসার্স সোহেল এন্ড রিফাত এন্টারপ্রাইজে কোকাকোলা পানীয় এর ডেলিভারীর কাজ করত।

অন্যদিকে মোঃ শামীম (২০) একই মালিকের এম আর এন্টারপ্রাইজ নামক অটো চার্জিং পয়েন্টে ম্যানেজার হিসেবে বিগত ২ বছর যাবৎ কাজ করত। গত ১৩ সেপ্টেম্বর সোহেল রানা আসামী আরাফাতকে চাকুরী থেকে বাদ দিয়ে দেয়। উভয় ব্যবসায় দেখাশোনার জন্য শামীমকে দায়িত্ব দেয়। এতে আসামী আরাফাত, নিহত শামীম এর উপর কিছুটা ক্ষিপ্ত ছিল। ১৫ সেপ্টেম্বর রাত অনুমান সাড়ে ৯টায় শামীম আসামী আরাফাতকে ২শ টাকা দেয় নেশাজাতীয় দ্রব্য গাঁজা কিনে আনার জন্য। কিন্তু আসামী আরাফাত উক্ত টাকা নিয়ে হোটেলে খাবার কিনে খেয়ে খরচ করে ফেলে।

মৃত শামীম আসামী আরাফাতকে যখন তার ২শ টাকা অথবা গাঁজার জন্য চাপ দেয় তখন আরাফাত বলে সে টাকা খরচ করে ফেলেছে, পরবর্তীতে সে টাকা ফেরত দেবে। শামীম আসামী আরাফাতকে তখন মোহাম্মনগর বাবলু সড়কস্থ এম আর এন্টারপ্রাইজ নামক অটো চার্জিং পয়েন্টে যাওয়ার জন্য বললে ১৫ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১০টায় আরাফাত সেখানে যায়। সেখানে শামীম ও আরাফাতের মধ্য ওই ২শ টাকার ব্যাপারে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে শামীম আরাফাতকে মা বোন তুলে গালিগালাজ করে এবং মারধর করে ও ধাক্কা দেয়। এতে আসামী আরাফাত ক্ষিপ্ত হয়ে বলে তুমি যে ব্যবহার গুলো করলে এর ফল ভোগ করতে হবে। এই বলে সে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায় এবং শামীমকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে ।

পরিকল্পনা অনুযায়ী আসামী আরাফাত পুনরায় ১৬ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১২টায় মোহাম্মনগর বাবলু সড়ক এম আর এন্টারপ্রাইজ অটো চার্জিং পয়েন্টে গিয়ে শামীমকে ঘুম থেকে উঠিয়ে বলে যে, সে বাড়িতে যেতে পারছে না, আজ রাতে তার সাথে ঘুমাবে। তখন শামীম গেট খুলে তাকে ভিতরে ঢুকিয়ে নেয় এবং দুই জন একসঙ্গে একই বিছানায় শুয়ে পড়ে। শামীম ঘুমিয়ে পড়লেও আরাফাত ঘুমায় না। যখন শামীম গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে তখন আসামী আরাফাত পরিকল্পনা মাফিক বিছানার পাশে থাকা শামীমের ব্যবহৃত গামছা দিয়ে শামীমের গলায় প্যাচ দিয়া শ্বাস রোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে।

ধস্তাধস্তির সময় শামীম তার বিছানা থেকে নিচে মেঝেতে পড়ে যায় এবং তার নিথর দেহ পড়ে থাকে। আসামী আরাফাত মৃত্যু নিশ্চিত জেনে শামীম এর বিছানা থেকে ২ টি মোবাইল সেট  এবং চাবি নিয়ে এম আর এন্টারপ্রাইজের পাশ্ববর্তী একই মালিকের মেমার্স রিফাত এন্ড সোহেল এন্টারপ্রাইজের সাটারের তালা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে ষ্টীলের আলমীরা খুলে ড্রয়ার থেকে নগদ ২১হাজার ৩৭১ টাকা ও টেবিলের পাশে থাকা তাক থেকে সিসি ক্যামেরার ডিভিআরটি নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে তার বাসায় যাওয়ার পথে সাচিবুনিয়া বিশ্বরোড হতে রূপসা ব্রীজগামী মহাসড়কের ময়ূর নদীর উপর হাতিয়া ব্রীজ থেকে ব্রীজের উত্তর পাশের নদীতে ডিভিআরটি ফেলে দেয়। মোবাইল ২ টি ও নগদ টাকা নিয়ে বাড়িতে গিয়ে ঘুমিয়ে থাকে।

জিজ্ঞাসাবাদকালে তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক উপস্থিত সাক্ষীদের উপস্থিতিতে আসামী আরাফাত এর ওয়াজেদনগরস্থ বাসায় অভিযান পরিচালনা করে তার বসত ঘরে রক্ষিত লেপ তোষকের ষ্টীলের ট্রাংকের ভিতর থেকে নিজ হাতে বাহির করিয়া দেওয়া মতে খোয়া যাওয়া দুইটি মোবাইল সেট ও নগদ ২১হাজার ৩৭১ টাকা উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়। পরবর্তীতে খুলনা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি টিমের সহায়তায় হাতিয়া ব্রীজের নিচে ময়ূর নদীতে তল্লাশী চালিয়ে মাঝ নদীর গভীর তলদেশ থেকে ডিভিআরটি উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়।

(ঊষার আলো-আরএম)