UsharAlo logo
শুক্রবার, ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে একনেকে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন

koushikkln
সেপ্টেম্বর ৭, ২০২১ ৬:৩৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা : উপকূলীয় এলাকায় পুরানো বাঁধ সংস্কারের পাশাপাশি টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে এক হাজার ২৩ কোটি টাকার ‘সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নং-১৫ পুনর্বাসন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প পাস হয়েছে। রাজধানীর শেরে বাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ প্রকল্পটিসহ ৮টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। একনেকে ‘খুলনা জেলার পোল্ডার নং-১৪/১ পুনর্বাসন’ শীর্ষক আরো একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।

মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সংযুক্ত প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভা শেষে প্রকল্পের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি সাংবাদিকদের জানান, এক হাজার ২৩ কোটি টাকার ‘সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নং-১৫ পুনর্বাসন’ শীর্ষক প্রকল্পটি সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নে বাস্তবায়ন করা হবে। চলতি বছরেই বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ শুরু করবে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, একনেক বৈঠকে উত্থাপনের অপেক্ষায় থাকা ‘খুলনা জেলার পোল্ডার নং-১৪/১ পুনর্বাসন’ শীর্ষক প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে, এক হাজার ১৭২ কোটি ৩১ লাখ টাকা। যা খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ও উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নে বাস্তবায়ন করা হবে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় প্রকল্পটির বিষয়ে কিছু সুপারিশ দেওয়া হয়েছিল। সেগুলো প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি একনেক বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। একনেক বৈঠকে অনুমোদন পেলে চলতি বছরেই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ শুরু হবে। যা ২০২৪ সালের জুনে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রকল্পটি অনুমোদন হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন উপকূলীয় জনপ্রতিনিধি ও নাগরিক ফোরামের আহ্বায়ক মীর মোস্তাক আহমেদ রবি এমপি। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও ঝড়-জলোচ্ছাসসহ নানা কারণে উপকূলীয় বাঁধগুলো মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পোল্ডারিংয়ের কার্যকারিতা বিলোপ হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে পোল্ডার এলাকাকে রক্ষা করতে হলে স্থায়ী বাঁধ তৈরি অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা দীর্ঘ দিন কথা বলছি, দেন-দরবার করছি। জনগণের আকাঙ্খাকে গুরুত্ব দিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার টেকসই বেড়িবাঁধ সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। যার অংশ হিসেবে এই প্রকল্পটি পাস হয়েছে। পর্যায়ক্রমে পুরো উপকূলীয় এলাকাকে টেকসই বেড়িবাঁধের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধের দাবিতে দীর্ঘ দিন আন্দোলন করছে নাগরিক সংগঠন ‘সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন’। এই সংগঠনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র বলেন, বেড়িবাঁধ দূর্বল হয়ে পড়ার কারণে পানির চাপ ও বাতাসের গতিবেগ বাড়লেই খুলনা-সাতক্ষীরা উপকূলের অনেক এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এমনকি কয়েকটি এলাকার বাঁধ যেকোনো মুহূর্তে বিলীন হতে পারে। তাই সরকারের নেওয়া প্রকল্পগুলো দ্রুত অনুমোদনের পাশাপাশি অনুমোদিত প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

উল্লেখ্য, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি বা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব বিবেচনা করে ‘সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নং-১৫ পুনর্বাসন’ শীর্ষক প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়। এই ১৫নং পোল্ডারটির তিন দিক খরস্রোতা খোলপেটুয়া নদ ও কপোতাক্ষ নদ দ্বারা বেষ্টিত এবং দক্ষিণ পাশে খোলপেটুয়া নদীর অপর পাশে সুন্দরবন। প্রকল্পটির আওতায় পুরানো বাঁধ বা অবকাঠামোর পুনরুজ্জীবিত করে কার্যকারিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে প্রকল্প এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ সুবিধা দেয়া এবং লবণাক্ততা দূরীকরণ করা হবে। এছাড়া বিদ্যমান কৃষি বা মৎস্য উৎপাদন নিবিঘ্ন করা সম্ভব হবে। প্রকল্পটি ৩ হাজার ৪৪১ হেক্টর এলাকার কৃষি জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে। যা এলাকার জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে ভূমিকা রাখবে।