ঊষার আলো ডেস্ক : সংবাদমাধ্যমকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে নোবেল লেখেন, ‘‘পত্রিকা নিয়ে এত মাতামাতির কী আছে? এখন তো ইন্টারনেটের যুগ। পাশের বাড়ির খালাতো ভাই গতকাল ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করে বলতেছে, ‘নোবেল ভাই, আমি সাংবাদিকতা শুরু করতেছি। দোয়া কইরো।’ বললাম, ‘ওকে’। তবে পত্রিকার সাংবাদিক অথবা আমি; আমরা কেউই দৈববাণীপ্রাপ্ত আল্লাহর অলি-আউলিয়া নই যে, অন্ধভাবে বিশ্বাস করতে হবে। নিউজপেপারে তো অনেক খবরই ছাপা হয়। আর আমিও রোজ রোজ তামাশা করি। সে বিষয়ে আমরা সকলেই অবগত এবং আমিও দুঃখিত।
ভারতের ‘সারেগামাপা’ থেকে উঠে আসা বাংলাদেশের আলোচিত কণ্ঠশিল্পী নোবেল সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন। অল্পের জন্য বেঁচেছে চোখ, ফেটেছে মাথা। বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় এক ‘বৃদ্ধ পথচারী’কে বাঁচাতে গিয়েই তার এই পরিণতি বলে জানিয়েছিলেন।
কিন্তু তার পরদিন প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে উঠে আসে, তার এই ‘মানবিক’ গল্পটি সাজানো। প্রকাশ পায় ভিডিও। বৃদ্ধ নয়, রং সাইড দিয়ে বাইক নিয়ে দ্রুতগতিতে এক সাইকেল আরোহীকে আঘাত করেছিলেন এই গায়ক নিজেই। তাই তার ফেসবুকের অসত্য বয়ানে সমালোচিত হন নোবেল। তিনি মিথ্যাচার করেছেন বলে অনেকেই তার তুমুল সমালোচনা করেন। বিষয়টি নিয়ে আবারও মুখ খুলেছেন এই সংগীতশিল্পী। সমালোচনার জায়গাটা স্পষ্ট করে না বললেও ক্ষুব্ধ নোবেল সব দোষ সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের ওপর দিতে চাইলেন।
নোবেল বলেন, ‘পত্রিকা নিয়ে এত মাতামাতির কী আছে? নিউজপেপারে তো অনেক খবরই ছাপা হয়। আর আমিও রোজ রোজ তামাশা করি।’
গত কয়েক দিন ফোনে নোবেলের খোঁজ না মিললেও গতকাল (২৫ এপ্রিল) তার ভেরিফায়েড পেজ নোবেল ম্যানে দেয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, ‘‘ছোটবেলায় নিউজপেপারে সুডোকু খেলতাম। শুকরিয়া। এরপর নিউজপেপার আর আমার কোনও কাজে এসেছে? ঠিক মনে পড়ে না। তবে হ্যাঁ, যেহেতু ‘নোবেল’ আপনাদের কাছে একটা পরিচিত নাম, এই নামে কিছু নিউজ তো ছাপা হতেই পারে। এতে ঘাবড়ে যাবার কিছু নেই।’’
তবে মাথায় ৩০টা সেলাই কেউ নিয়ে তামাশা করে না। আর আমি প্রকাশ্যে, অগোচরে এমনকি অবচেতনেও মিথ্যাচার করি না। প্রকাশ্যে মিথ্যা বলতে পারলে এত সমালোচনা থাকতো না।’’
এদিকে, দুর্ঘটনা নিয়ে নোবেল অতিরঞ্জিত গল্প প্রকাশিত করেছেন বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। ২২ এপ্রিলে বলা সে ঘটনা নিয়ে গায়কের ভাষ্যটি হুবহু এমন, ‘এক বয়স্ক লোক অসতর্কভাবে রাস্তা পার হচ্ছিলো। তাকে বাঁচাতে গিয়ে আমার এই অবস্থা। তবু মনে তৃপ্তি অনুভব করছি, কারণ লোকটা নিরাপদে আছে।’ গুরুতর আহত হয়ে রক্তাক্ত মুখের ছবি দিয়ে নোবেলের এমন বয়ানে বিস্ময় প্রকাশ করেন একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী।
দুর্ঘটনা নিয়ে নোবেলের এমন ভাষ্যের বিপরীতে প্রত্যক্ষদর্শী শোয়াইব বিন আহসান ও আমিনুল ইসলাম আমিন নামের দুই সাধারণ মানুষ নিজেদের চোখে দেখা ঘটনাটি তুলে ধরেন। এরমধ্যে প্রথমজন ফেসবুকে লেখেন, ‘কী সুন্দর মিথ্যাচার করে আবার আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছে নোবেল!’ অন্যজন সরাসরি ঘটনার ভিডিও প্রকাশ করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। যেখানে দেখা যায়, নোবেল গুরুতর আহত করেছেন কোনও বৃদ্ধকে নয়, এক তরুণ সাইকেল চালককে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাস্তার উল্টাপাশ থেকে হঠাৎ তুমুল গতিতে আসা নোবেলের লাল বাইকের চাপায় রক্তাক্ত হয়েছেন ওই তরুণ। ভেঙেছে সাইকেল, নষ্ট হয়েছে সঙ্গে থাকা ইফতারের জন্য কলা-মুড়ি-খেজুর-ছোলা। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) গুলশান আজাদ মসজিদের পাশের গলিতে, ইফতারের কয়েক মিনিট আগে।
প্রত্যক্ষদর্শী টঙ্গীর তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী শোয়াইব বলেন, ‘রং সাইডে বাইক চালিয়ে এসে সাইকেল আরোহীর ওপর দিয়ে সোজা চালিয়ে দিলো নোবেল! যেখানে লোকটা সারাদিন পানাহারের পর ইফতার করে তার ক্ষুধা নিবারণের কথা, সেখানে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়লো সেদিন সন্ধ্যায়। আর নোবেল সবাইকে জানালো বৃদ্ধকে জীবনদানের গল্প!’
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ইফতারের আগমুহূর্তে একটা লোক সাইকেলে করে কলা, খেজুর, ছোলা মানে ইফতার সামগ্রী নিয়ে বাসায় যাচ্ছিলো। নোবেল ম্যান নামের ওই শিল্পী রং সাইড থেকে বাইক দিয়ে মেরে দিয়েছে। ঘটনাটি একেবারে আমার সামনে ঘটেছে। দু’জনই ইনজুরড হয়েছে কিন্তু সাইকেলের লোকটার অবস্থা খুব সিরিয়াস ছিল। আর সাইকেলের যা অবস্থা হয়েছে, সেটা কোনও ভাঙারি দোকানেও বিক্রি করা যাবে না। পরে ২/৩ জন লোক দিয়ে আহত লোকটাকে ল্যাবএইডে পাঠালাম রিকশায় করে। নোবেল ম্যানকেও বললাম, আপনিও বাইকটা আমাদের এখানে রেখে ল্যাবএইডে যান। উনি আমাদের কথা না শুনে বাইক নিয়ে চলে গেলেন। যাওয়ার সময় উনার সঙ্গে আমাদের এখান থেকে একজনকে সঙ্গে দিলাম। কারণ, উনার মাথা থেকেও রক্ত ঝরছিল। পরে শুনি, বনানী গিয়ে আমাদের ওই লোকটাকে আটকে রেখেছে! এই হলো কাহিনি!’
এদিকে এই বর্ণনার সত্যতা স্বীকার করে আরেক প্রত্যক্ষদর্শী ঘটনার একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। যেখানে দেখা গেছে পিঠে গিটার ঝোলানো রক্তাক্ত নোবেল ও সাইকেলওয়ালাকে।
(ঊষার আলো-এমএনএস)