মোঃ আশিকুর রহমান : নিম্নচাপ রেকর্ড বৃষ্টিতে ১৪ সেপ্টেম্বর (বুধবার) খুলনায় ভারী বর্ষণে শহরে অধিকাংশ সড়ক, স্থানীয় এলাকার রাস্তাঘাট, এমনকি নিঁচু এলাকাসহ বাসা-বাড়িও প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে মাছের ঘেরসহ মাছ চাষের জলাশয় ও পুকর। ভারী বর্ষণ শেষে খুলনায় স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করলেও হাঁটুজলে নগরীর বাস্তাহারা কলোনীর বাসিন্দারা। শহরের পানি দূরকরণ হলেও বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে ২৪ ঘন্টার সর্ব্বোচ যে বৃষ্টিপাত হয়েছে তারই যেন আঁচ রয়েছে গেছে এখনো ওই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাটিতে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানাগেছে, নগরীর বাস্তাহারা কলোনীতে ১২৭৫টি পরিবারে প্রায় ১৫ হাজার লোকের বসবাস। ভারী বর্ষণের করণে যেন ঘন বসতিপূর্ণ ওই এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। তারপরও সু-সংবাদ বসবাসকারী এলাকাবাসীর জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ দূরকরনের জন্য কেসিসি ইতোমধ্যেই বাস্তহারা হতে ক্ষুদের খাল পর্যন্ত খালখননের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ হাতে নিয়েছে।
১৮ সেপ্টেম্বর (রবিবার) দুপুরে এলাকাটিতে গিয়ে দেখা যায়, বাস্তাহারা কোলনী ৮নং রোড, ১০নং রোড ও ১১নং রোডে হাঁটুজল পানি রয়েছে। পাশাপাশি ১২ নং রোড ও সেমিপাকা কোলনীতেও রয়েছে আংশিক পানি জমা। এলাকাটিতে রয়েছে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও প্রাথমিক স্কুল। ভারী বর্ষণের কারণে বিদ্যালয় চত্ত¡রসহ সড়কে জমে রয়েছে হাঁটুজল। জমে থাকা পানির কারণে বাস্তহারা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিচতলার ভবন ছেড়ে দ্বিতীয় তলায় ক্লাস করতে দেখা গেছে। একই অবস্থা পার্শ্ববর্তী প্রাথমিক স্কুল ও মসজিদ চত্ত¡রেও। বিদ্যালয় ছুটির শেষে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কোমলমতি স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের নোংরা হাঁটুজল পানি উপেক্ষা করে ঘরে ফিরতে দেখা গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গেল কয়েকদিন আগে ভারী বর্ষার কারণে বাস্তাহারা কোলনীর প্রতিটি অলিগলিসহ বাসা-বাড়ীতে পানি উঠে যায়। ঘরে পানি উঠে বহু আসবারপত্র নষ্ট হয়ে গিয়েছে। খুলনায় ভারী বর্ষা পাঁচ দিন শেষ হয়ে গেলেও এখনো কোলনীর কয়েকটি সড়কে হাঁটুজল পানি থাকার কারনে চলাচলে চরম অসুবিধা পোহাচ্ছে তারা, এমন নোংরা পানির মধ্যে দিয়ে চলাচলের কারনে পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে চুলকানির হাত হতে রেহায় মিলছেনা। এলাকাবাসী পানি অবসারণের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
১১নং রোডের বাসিন্দা মালেক মোল্লা জানান, বাস্তহারাতে বহু পরিবারের বসবাস। কিন্তু এলাকাটি নিঁচু হওয়ার কারনে সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে যায়। তাছাড়া এলাকার ভেতরে যে ড্রেন রয়েছে, তারও নিঁচু ও ময়লা আবর্জনায় ভরাট হয়ে হওয়ার দরুন পানি সরে না। যে কারণে এলাকায় জলবদ্ধতা দেখা দেয়। গেল কয়েকদিন আগে যে বৃষ্টি হয়েছে তাতে এলাকার অধিকাংশ বাসা-বাড়ী ও রাস্তায় পানি ওঠে গেছে। ৫ দিন হয়ে গেলেও এখনো রাস্তা জুড়ে হাঁটুজল পানি। পানিতে নামলেই চুলকানি হতে রক্ষা নেই। পানি পাড় না হয়ে ঘরের বাইরে যাওয়ার কোনো উপায়ও নেই।
বাস্তহারা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র ইয়াসিন জানান, বৃষ্টির কারণে আমাদের বিদ্যালয়ের যাওয়ার রাস্তা এমনকি বিদ্যালয়ের ক্লাস রুমের মধ্যেও পানি ঢুকে গেছে। ক্লাসে পানি ঢুকে যাওয়ার কারনে নিচে বসে ক্লাস করতে না পেরে শিক্ষকরা দো’তলায় আমাদের ক্লাস করিয়েছেন। তাছাড়া নোংরা-ময়লা পানির ভেতর হতে আমাদের বর্তমানে বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করা লাগছে।
১০নং রোডের বাসিন্দা সবুজ জানান, এই রোডটিতে প্রায় শতাধিক পরিবারের বসবাস। একটু ভারী বৃষ্টি হলেই রাস্তায় পানি জমে। ঘর হতে বের হওয়া দায় হয়ে পড়ে, চলাচলে পোহাতে হয় দূর্ভোগ। শুনেছি কেসিসি খাল খননের উদ্যোগ গ্রহন করেছে জলাবদ্ধতা দূরনের জন্য। এই খালখনন হলে এলাকায় পানি জমবে না, আর দূর্ভোগও পোহাতে হবে না, বৃষ্টি হলে জমা পানি সহজেই নেমে যাবে।
বাস্তহারা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ এজাহার আলী মোড়ল জানান, এলাকাটি নিঁচু হওয়ার কারনে এলাকা ভেতরে ড্রেন থাকলেও পানি না সরার কারনে এই জলবদ্ধতা। এ বিষয়ে আমরা একাধীকবার উর্ধ্বতন ব্যক্তিবর্গের সাথে কথা বলেছি। এলাকাটি নিঁচু হওয়ার কারণে বিদ্যালয়টি ২ ফুট উঁচু করা হয়েছে, তবুও বৃষ্টি-বাদল হলে জলবদ্ধতা দেখা দেয়। এ সমস্যা হতে পরিত্রানের একমাত্র উপায় হলো এলাকার মধ্যে ড্রেনগুলো আবর্জনা নিষ্কাশন করে সরাসরি বড় ড্রেনে গিয়ে যদি পানি পড়ে এবং সঠিক পানি প্রবাহের মাধ্যমে দ্রæত সরে যায় তবেই জলবদ্ধতা দূর হতে পাড়ে বলে আমি মনে করি। পাশাপাশি বাস্তহারার খালটিও খনন করাও দরকার।
খুলনার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা খুলনা অঞ্চল খুলনার উপ-পরিচালক এস.এম আব্দুল খালেক জানান, সৃষ্ট সমস্যার বিষয়টি বিদ্যালয়টিতে সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
কেসিসি’র যান্ত্রিক বিভাগের (তত্ত¡বধায়ক) নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল আজিজ জানান, মুলতঃ বাস্তহারা কলোনীর ভেতরে ড্রেন থাকলেও সামান্য বৃষ্টি হলেও পানি জমে, কারণ পানি নামার কোনো জায়গা নেই। পার্শ্ববর্তী যে খালটি আছে তা বলতে গেলে ভরাট। এই জলবদ্ধতা দূরকরণের জন্য কেসিসি ইতিমধ্যে খালখনের উদ্যোগ গ্রহন করেছে। প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। বাস্তহারা হতে ক্ষুদের খাল পর্যন্ত খাল খনন হলে বাস্তহারা কোলনীতে আর কোনো জলবদ্ধতা থাকবেনা বলে আমি মনে করি। ইতিমধ্যেই জলবদ্ধতা নিরসনে সংশ্লিষ্ট বিভাগ কাজ করছে, তথাপি ওই এলাকাটিতে স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীর জলবদ্ধতার কারণে চলাচলে দূর্ভোগের বিষয়ে বলা হয়েছে সেহেতু এ ব্যাপারে দ্রতই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
কেসিসি সূত্রে জানা গেছে, খুলনা সিটি কর্পোরেশন ৪৯৭ কোটি টাকার যে প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহন করেছে এর মধ্যে নগরীর বাস্তহারা কোলনীর জলবদ্ধতা দূরকারণে খালখননও রয়েছে। যা বাস্তহারা হতে শুরু করে ক্ষুদের খাল পর্যন্ত খনন করা হবে। প্রকল্পটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে প্রকল্পটির অনুমোদন মিলেছে,এরপর প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে যাবে। সেখানকার বৈঠক শেষে অনুমোদন মিললে প্রকল্পটি একনেকে যাবে, একনেকে প্রকল্পের পাশ হলে কাজ শুরু হবে।