মোঃ মেহেদী হাসান, মণিরামপুর : যশোরের মণিরামপুরের এক মাদ্রাসা শিক্ষক এবার সেরা একটি ষাঁড় পুষছেন। সামনের কোরবানির ঈদে তিনি ষাঁড়টি বিক্রি করতে চান। ছয় ফুট উচ্চতা ও সাড়ে ১২ ফুট লম্বা আকারের ষাঁড়টির দাম তিনি ১৫ লাখ টাকা হাকাচ্ছেন। স্থানীয় ব্যাপারীরা ইতিমধ্যে ষাঁড়টির দাম আট লাখ টাকা তুলেছেন। নিউজিল্যান্ডের ফ্রিজিয়ান জাতের বৃহদাকার এই গরুটির নাম তিনি রেখেছেন গ্রামীণ ষাঁড়।
গত চার বছর ধরে ষাঁড়টি পুষছেন আকরাম হোসেন। ষাঁড়টির ওজন ৩৮-৪০ মণ। শিক্ষকের দাবি, ষাঁড়টি শুধু মণিরামপুরের নয় যশোর জেলার মধ্যে এবারের সেরা। একই দাবি উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরেরও। বৃহদাকার ষাঁড়টি একনজর দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে বহু মানুষ নিত্য আকরাম হোসেনের বাড়িতে ভিড় করছেন। আকরাম হোসেনের বাড়ি উপজেলার কাশিপুর গ্রামে। তিনি স্থানীয় হালশা আদর্শ মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সহকারি শিক্ষক। পেশায় শিক্ষক হলেও ছাত্রজীবন থেকে গরু পালন তার শখ। সেই থেকে শংকর জাতের গরু পুষছেন তিনি। উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের নিবন্ধনকৃত খেদাপাড়া ইউনিয়ের সেবা খামারি আকরাম। গ্রামীণ ষাঁড়টি ছাড়া তার খামারে আরও একটি বড় ষাঁড় রয়েছে।
রোববার (২০ জুন) সরেজমিনে উপজেলার কাশিপুর গ্রামস্থ আকরাম হোসেনের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, ১৯৯৫ সালে এইচএসসি পাশ করি। তখন থেকে গরু পোষার শখ। ওই বছর প্রথম আমি মণিরামপুরে শংকর জাতের গরু আনি। এরপর থেকে গাভী পালন শুরু করি। প্রথমদিকে গাভী পুষতাম আর বিক্রি করতাম। একটা গাভী পালন করে তিন লাখটাকায় বিক্রি করেছি। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি একটা এঁড়ে বাছুর জন্ম নেয়। চার বছর পোষার পর বাছুরটি আজকের এই গ্রামীণ ষাঁড়ে পরিণত হয়েছে।শিক্ষক আকরাম হোসেন বলেন, শিক্ষকতার পাশাপাশি সার্ভেয়ারের কাজও করি। আমার স্ত্রী হাসিনা খাতুন মূলত খামার দেখাশুনা করেন। করোনায় দীর্ঘদিন মাদরাসা বন্ধ থাকায় ষাঁড়টির যত্ন নিচ্ছি আমি। বাজারের কোন ফিড খাইয়ে না, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার পরামর্শে খৈল, ভুষি, ক্ষুদের ভাত, বিচালি ও কাচা ঘাস খাইয়ে গরুটি পুষেছি। একবছর ধরে প্রতিদিন ওর খাবারের পিছনে ৩০০ টাকা ব্যয় হচ্ছে বলেন আকরাম হোসেন। রোববার সকালে আকরাম হোসেনের বাড়িতে মানুষের ভিড় দেখা গেছে। তারা সবাই দূর-দূরন্ত থেকে ষাঁড়টি দেখতে এসেছেন। এদের মধ্যে একজন মোহনপুর গ্রামের গৃহবধূ খাদিজা খাতুন। তিনি বলেন, বড় গরুর খবর শুনে দেখতি আইছি। এতবড় গরু কখনো দেখিনি।
কাশিপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল গফুর বলেন, গতবছর মণিরামপুরের হরেরগাতী গ্রামের হাসমত আলীর বাংলার বস নামের সেরা ষাঁড়টি দেখেছি। ইত্যা গ্রামের পালসার বাবুকেও দেখেছি। গ্রামীণ ষাড়ের তুলনায় ওগুলো কিছু না। এই ষাঁড়টির ওজন ৩৮-৪০ মণ হবে। আমার দেখা চোখে এটি এবারের সেরা গরু। আকরাম হোসেন বলেন, সকাল হলে গরু দেখার জন্য বাড়িতে মানুষের আনাগোনা শুরু হয়। বিকেলে লোকসংখ্যা বেশি হয়। খুলনার ডুমুরিয়া ও কেশবপুর এলাকা ছাড়াও বহু দূর থেকে পিকআপ ভরে মানুষ গরু দেখতে আসেন। খামারিদের উদ্দেশে আকরাম হোসেন বলেন, বাজারের ফিড খাইয়ে কেউ গরু মোটাতাজা করতে যাবেন না। ওতে শুধু টাকা খরচ হয়। গরুর দেহ ঠিক থাকে না। কাঙ্খিত ফল পেতে হলে গরুকে বিচালি ও কাচা ঘাসের সাথে খৈল ভুষি খাওয়াতে হবে। মণিরামপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. আবুজার সিদ্দিকী বলেন, আমাদের সাথে পরামর্শ করে খামার চালান শিক্ষক আকরাম। ওই শিক্ষকের ষাঁড়টি আমি দেখেছি। ষাঁড়টির দেহে ২৬-২৭ মণ মাংস আছে। মণিরামপুরে এবারের সেরা কোরবানির পশু এটি।
(ঊষার আলো-আরএম)