UsharAlo logo
শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

হুমকির মুখে বাগেরহাটের চিংড়ি চাষ

usharalodesk
মে ৬, ২০২১ ১১:২৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বাগেরহাট প্রতিনিধি : গলদা চিংড়ির আরেক নাম হোয়াইট গোল্ড। আর এই গলদা চিংড়ির সিংহভাগই আসে বাগেরহাট থেকে। চাষিদের প্রধান আয়ের উৎস এই গলদা চিংড়ি। বাংলা বছরের প্রথমে একঝাক স্বপ্ন বুকে নিয়ে চাষিরা তার ঘেরে, পুকুরে মাছ ছাড়ে। তাদের কল্পনায় থাকে বছর শেষে চিংড়ি বিক্রি করে তারা তাদের স্বপ্ন পূরণ করবে।
পূর্বে তারা করতে পারলেও বিগত কয়েক বছর তাদের স্বপ্ন আর পূরণ হচ্ছে না। এর প্রথম কারণ দাম কমে যাওয়া। আর এই চিংড়ি চাষ এখন চাষিদের গলার কাটা। না পারে তারা ছেড়ে দিতে, না পারে চাষ করতে। তারপরও কোন চাষি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেয়ে করছে আবার কোন চাষি চিংড়ি চাষ ছেড়ে দিচ্ছেন। যার ফলে যেমন বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে আর আমাদের দেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছে।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর এর চিংড়ি চাষি ইমরান হাওলাদার বলেন, আমি গত ৪ বছর ধরে চিংড়ি চাষ করছি প্রথম বছরে কিছু লাভের মুখ দেখলেও গত দুই বছর ধরে চিংড়ির দাম না থাকায় লোকসানে পড়তে হচ্ছে। আর এভাবে চললে চিংড়ি চাষ ছেড়ে দিতে হবে।


জেলার ফকিরহাট সদর ইউনিয়নের রাজিব হোসেন(৪৬) বলেন, আমি গত ২০ বছর ধরে চিংড়ি চাষ করি।আগে অনেক লাভ হতো। কিন্তু গত বছর আর এ বছর চিংড়িতে দাম না থাকার কারণে ও চিংড়িতে ভাইরাসের কারণে। উৎপাদনও কম হচ্ছে আবার দামও পাচ্ছি না। যার কারণে আমার আসল টাকা থাকা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পূর্বে এই চিংড়ি বিদেশে রপ্তানি করে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেছে এই দেশের চাষিরা। কিন্তু কিছু অসাধু লোকের জন্য বিদেশে রপ্তানি বন্ধ প্রায়।
সিএন্ডবি বাজার আড়তদার বলেন, আগে যে পরিমাণ মাছ উঠতো এখন আর সে পরিমাণ মাছ ওঠেনা। যা ওঠে তাও আবার দাম কম। তাছাড়া গত বছর লক ডাউনের কারণে আড়তদারদের আড়ত বন্ধ রাখতে হয়েছিলো। এবার লকডাউনে সীমিত সময় খোলা রাখলেও আগের মত দাম ও মাছ আসেনা।
অন্যদিকে কোভিড-১৯ এর থাবায় থমকে গেছে চিংড়ি চাষিদের ভাগ্য। আরও আছে চিংড়ির খাবারে দাম বৃদ্ধি ও ভেজাল। আর তার সাথেই আছে বিভিন্ন ভাইরাসের সংক্রমণ। যার কারণে হুমকির মুখে আজ হোয়াইট গোল্ড খ্যাত গলদা চিংড়ি,বাগদা চিংড়িসহ মাছ চাষ। আর এর সাথে সাথে শেষ হয়ে যাচ্ছে কৃষকের সপ্নগুলো।
চিংড়ি চাষ এখন ধরে না রাখলে অদূর ভবিষ্যতে চিংড়ি চাষ থেকে সবাই সরে আসবে। তাই এই চিংড়ি শিল্পকে বাঁচাতে সরকারসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে কর্মহীন হয়ে পড়বে দেশের একটা বড় অংশ জনগণ।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম রাসেল বলেন, করোনার প্রভাব পড়েছে চিংড়ি শিল্পেও। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রান্তিক চাষিরা। চাষিদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে জেলার ২৮ হাজার মৎস্য চাষিকে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ৪ শতাংশ সুদে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার সুবিধা দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি মাছের ভাইরাস, পোনা সংকট ও বিভিন্ন রোগের সমস্যা রোধে আমাদের কাজ চলছে।


তিনি আরও বলেন, জেলায় মৎস্য অধিদফতরের লাইসেন্সকৃত গলদা পোনা উৎপাদনকারী সাতটি হ্যাচারি এবং লাইসেন্সবিহীন কয়েকটি হ্যাচারী ছিল। যা দিয়ে চাহিদার বড় অংশ পূরণ হতো। কিন্তু ২০১৮ সালে হ্যাচারিগুলো বন্ধ হয়ে গেলে সংকটে পড়েন চাষিরা।
এখন বাগেরহাটের দু’একটি হ্যাচারি গলদার রেণু উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আশা করি, উৎপাদনে যেতে পারবে তারা।

(ঊষার আলো-এমএনএস)