UsharAlo logo
সোমবার, ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গোটা সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় এক ধরনের নৈরাজ্য চলছে: চরমোনাই

koushikkln
মে ২১, ২০২২ ৬:৪৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো প্রতিবেদক : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, স্বাধীনতা পরবর্তী যারাই ক্ষমতায় এসেছে, সবাই জনগণের স্বপ্নকে গলা টিপে হত্যা করেছে। সবাই জনগণের সঙ্গে অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। গণমানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। দেশ শাসনের নামে জনগণকে জিম্মি করে রেখেছে। জনগণের সকল মৌলিক অধিকার হরণ করেছে। জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করেছে। গণতন্ত্রের নামে সর্বত্র দলীয়করণ এবং স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। গুম ও খুনের রাজত্ব কায়েম করেছে। দুর্নীতি, লুটপাট এবং সুদ ও ঘুষকে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। শাসক শ্রেণীর এহেন কর্মকা-ের ফলে স্বাধীনতা আজ অর্থহীন হয়ে পড়েছে। গোটা সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় এক ধরনের নৈরাজ্য চলছে। জাতিকে নেশাগ্রস্ত করতে মদের বিধিমালা প্রণয়ন করতে সরকার ও তাদের দোসররা মরিয়া হয়ে উঠেছে। দেশ আর এভাবে চলতে পারে না।

শনিবার (২১ মে) বিকালে খুলনা রেলস্টেশন সংলগ্ন কদমতলা রোডে এক সমাবেশে ইসলামী আন্দোলনের বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, একটি অপশক্তি ইসলাম ও দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করছে। তারা সাম্প্রদায়িকতাকে কৃত্রিমভাবে উপস্থাপন করে বৈশ্বিক হানাদার শক্তির দৃষ্টি আকর্ষণের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ ধরনের দেশ ও ইসলামবিরোধী কর্মকা- রুখে দিতে হবে।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫১তম বর্ষে এসেও আজকের সরকার ৭১ পুর্ববর্তী সরকারের মতো নিপিড়নমূলক আচরণ করছে। দেশের সাধারণ নাগরিকদের কোনো অধিকার ও সম্মান নেই। সকল অধিকার ভোগ করছে ক্ষমতাসীন এবং তাদের দোসররা। অথচ স্বাধীনতা উত্তর দেশের মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল, স্বাধীন দেশে তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। স্বাধীন নাগরিক হিসেবে মর্যাদা পাবে, সম্মান পাবে। বাক স্বাধীনতা পাবে, ন্যায়বিচার পাবে। জানমাল, ইজ্জত-আব্রুর এবং জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবে। অর্থনৈতিক সাম্য ও রুটি রুজির নিশ্চয়তা পাবে। একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান পাবে।

মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, জনগণ আজ ভালো নেই, সাধারণ মানুষ তাদের চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ করতে পারছে না। কারণ মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে । ভোজ্য তেল, চাল, ডাল, গ্যাসসহ সকল নির্মাণসামগ্রী মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। অথচ সরকার এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সরকার এ ব্যাপারে যথাযথ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। সাধারণ মানুষ ক্ষোভে ফুঁসছে। কিন্তু হামলা-মামলা ও হয়রানির ভয়ে প্রতিবাদও করতে পারছে না|

তিনি বলেন, দেশের মানুষ আজ আতঙ্কিত। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরাও আজ চিন্তিত। দেশময় সংঘাত আর সহিংসতার অশনি সংকেত পাওয়া যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নবম জাতীয় সংসদে একতরফাভাবে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাশ করার পর থেকেই রাজনৈতিক সংকটে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। আমরা বারবার রাজনৈতিক সংকট উত্তরণের দাবি জানিয়ে আসছি। দেশের প্রায় সব রাজনৈতিকদল এবং নাগরিকসমাজের প্রতিনিধিগণ সংকট সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলে আসলেও, কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকেই ধ্বংস করে ফেলেছে। বিগত ১৩ বছরে দেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতেও জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেনি। ক্ষমতাসীনরা তাদের দলীয় লোকদেরকে নির্বাচিত করার জন্যে এহেন কাজ নেই যা করেনি। নির্লজ্জভাবে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসন কেউই নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেনি। ফলে নির্বাচনকে মানুষ এখন প্রহসন এবং তামাশা মনে করে। আগামীতে মানুষ আর তামাশা ও প্রহসনের নির্বাচন দেখতে চায় না। আবারও ২০১৪ ও ১৮ এর নির্বাচনের মতো নির্বাচনের নামে প্রহসন হবে। রাতের ভোটে নির্বাচিত বর্তমান সংসদের কোনো নৈতিক বৈধতা নেই। এই অবৈধ সংসদ বহাল রেখে কোনো নির্বাচন দেশবাসী মেনে নেবে না।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা বিভাগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত বিশাল সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দলের নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা আব্দুল আউয়াল।
সমাবেশে বক্তৃতা করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী ফয়জুল করীম, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, মাওলানা আব্দুল কাদের অধ্যাপক বেলায়েত হোসেন, মাওলানা শোয়াইব হোসেন, দপ্তর সম্পাদক মাওলানা লোকমান হোসেন জাফরী, জয়েন্ট সেক্রেটারি জেনারেল মুফতী মোস্তফা কামাল প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন শেখ মো. নাসির উদ্দিন, হাফেজ আসাদুল্লাহ গালীব ও মুফতী ইমরান হোসাইন।