UsharAlo logo
বুধবার, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নগরীতে চরম দুর্দিন আর অনিশ্চয়তায় ফুটপাত ব্যবসায়ীরা

usharalodesk
জুন ৮, ২০২১ ৯:২৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো প্রতিবেদক : খুলনা মহানগরীর বুকে অতি আদী একটি পুরাতন ঐতিহ্যবাহী বাজার হলো দৌলতপুর বাজার। এই বাজারকে ঘিরে এতদাঞ্চলের একাংশ মানুষের জীবন-জীবিকা চলে, চলে রুটি-রুজি। ভিন্নি-ভিন্ন ব্যবসা নিয়ে বাজারে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছে এ অঞ্চলের মানুষ। কেউ কাঁচা সবজি, কেউ বা মাছ কিনে এনে বাজারে বিক্রি করে, কেউ কাপড়ের দোকান, কেউ প্রসাধণী সামগ্রী, কেউ জুতা বা বেল্টসহ নানান সামগ্রী নিয়ে ব্যবসা করছে। তবে সকলের সামর্থ্য নেই কোন আধুনিক বিপনী নিয়ে এসি’র বাতাস গায়ে লাগিয়ে বসে-বসে ব্যবসা করার। তাই শতাধিক ব্যবসায়ীরা দৌলতপুর বাজার রেললাইনের পশ্চিম পাশের ফুটপাথ ঘেঁষে ভিন্ন-ভিন্ন সামগ্রী নিয়ে বসে পড়েছে। যার মধ্যে চৌকির খাটের উপর ছোটদের পোশাক, সিট কাপড়, চুড়ি ফিতাসহ জুতার দোকানই অধিকাংশ। এ সকল ব্যবসায়ীরা প্রায় সর্বসময় ঘাত প্রতিঘাতের মুখেই থাকেন। প্রকৃতির সাথে লড়াই, প্রভাবশালীর প্রভাব আর সর্বশেষ করোনার বেত্রাঘাতের কারণে তাদের সম্প্রতি সময় কাটছে অনিশ্চয়তা আর চরম দুর্দিনে। করোনা যেন তাদের সর্বশান্ত করে তুলেছে।

সময়ের ঘড়িতে দুপুর ৩টা প্রায়। ছোট বাচ্চাদের হরেক রকম পোশাকে দোকান সাজানো। পোশাকগুলো বাতাসে দুলছে। তবে সেদিকে খেয়াল নেই দোকানীর। কারণ সকাল হতে ক্রেতার পানে চেয়ে চেয়ে অবশেষে ভরা দুপুরের রোজা রাখা ক্লান্ত শরীরে দু’চোখে ঘুম চলে এসেছে মধ্যডাঙ্গার বাসিন্দা এনামুলের। দীর্ঘ ৭ বছরের মতো ঢাকা মিরপুরের একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করে বাবা, মা, স্ত্রী’র ভরণ-পোষন চালিয়ে আসছিলেন। কিন্তু করোনার প্রকোপে রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার দরুন মালিক দেশের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার পারমানেন্ট টিকিট কেটে দিয়েছে। তাই করোনা তাকে ঢাকা হতে বিদায় করে দিলেও খুলনা দৌলতপুর রেললাইনের ব্যবসায়ও নিবিড় আদরে রাখেনি। পরিবারের ভরণ-পোষন চালানোর জন্য একটু একটু করে জামানো প্রায় লক্ষ টাকা দিয়ে শুরু করেছে বাচ্চাদের পোশাকের ব্যবসা প্রায় ৪ মাস। করোনার মধ্যেই আবার জন্ম নিয়েছে একটি সন্তানও। তাই পরিবারের বাড়তি চাপ সামলাতে রাতদিন পরিশ্রমের ঘাটতি নেই তার। তারপরও করোনার প্রভাব তাকে ভালো থাকতে দিচ্ছে না। নেই কাংখিত কেনাবেচা। বেকার মাসে ৬ হাজার টাকা ভাড়া গুনতে হচ্ছে বসে বসে। অবশেষে বেকার বসে থাকা হতে মুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে ইজিবাইক চালাবে সে, তাতে করে অন্তত তাকে দোকান ভাড়া আর গুনতে হবে না।
তরতরে যুবক আরিফ। বাসা বাস্তহারা। খালিশপুর পিপলস জুট মিলে তাঁত ডিপার্টমেন্টে বদলী কাজ করে সংসার চালাতো। মিল বন্ধ হয়ে গেছে। তাই বহু কষ্টে আর ধারদেনা করে অবশেষে ঢাকা থেকে কাটা সিট কাপড় কিনে এনে ফুটপাতে বসে বিক্রি করছে। দোকান ভাড়া ৪হাজার টাকা। সামনে কাপড় আর পেছনে দেয়াল। দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে অলস সময় কাটাচ্ছে। তিনি জানান, পরিবারের ভরণ-পোষন জোগাড়ে হিমশিম খাচ্ছি। কোনো কেনাবেচা নেই, জানিনা সামনের দিনগুলো কেমন যাবে?
আমতলার বাসিন্দা আলামিন শপের মালিকসহ ফুটপাথের একাধিক ব্যবসায়ী একই কথা বলছেন। করোনার প্রথম হতে এ সকল ব্যবসায়ীরা দীর্ঘ লকডাউন আর প্রশাসনের কঠোর চাপের মুখে কাংখিত কেনাবেচা করতে পারেনি। তবে গেল ঈদে মোটামুটি কেনাবেচা করলেও বর্তমানে বলতে গেলে কোন কেনাবেচা নেই। তাই বর্তমানে দৌলতপুরের সমগ্র ফুটপাথের ব্যবসায়ীরা চরম উৎকন্ঠা আর দুর্দিনে দিন নিপেতিত করছে। করোনার প্রভাব ব্যবসায়ীদের করে তুলেছে সর্বশান্ত, তারা নিজ পরিবারের ভরণ-পোষন যোগাতে বর্তমানে হিমহিম খাচ্ছে।

(ঊষার আলো-এমএনএস)