UsharAlo logo
বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নগরীতে ডাবের গায়ে আগুন, সাধারণ পিপাসুরা বিপাকে

usharalodesk
এপ্রিল ৭, ২০২১ ১০:৩০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মো: রায়হান মোল্লা : গরমের তান্ডবে নগরীতে ডাবের গায়ে আগুন লেগেছে। মাত্র একটি ডাবের দাম সেঞ্চুরি ছুই ছুই করছে। যা অন্যবারের তুলনায় এবার ডাবের দাম রেকর্ড গড়েছে। ছোট সাইজ ৬০, মাঝারি ৭০ আর বড় ৮০ টাকা। তবে শিশু হাসপাতালের সামনে বড় সাইজের ডাব বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা, আর নিম্নে ৭০। কিন্তু অন্যান্য জায়গায় এখনও একশ ছুইনি।
পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা দাবি করছে, এখন নারকেল গাছে ফল কম। তাই প্রতিযোগীতা করে ডাব সংগ্রহ করতে হচ্ছে। সেই কারনে ডাবের দাম এতো। সামনে রমজান মাস। রোজাদাররা ডাবের পানি দিয়ে তৃষ্ণা নিবারণ করে থাকে। তখন এর চাহিদাও বহুগুণে বেড়ে যাবে। তাই এর দাম আরও বাড়তে পারে বলে দাবি করছে তারা।
এদিকে, ডাবের পানি খাওয়ার ওপর অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন চিকিৎসকরা। একাধিক গবেষণায় এসেছে, যদি নিয়ম করে ডাবের পানি খাওয়া যায়, তাহলে একাধিক রোগ শরীরের ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না। ডাবের পানিতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যামাইনো অ্যাসিড, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, মেঙ্গানিজ ও জিঙ্ক নানাভাবে শরীরে গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এটি খেলে শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ, ওজন কমানো, কিডনি ফাংশনের উন্নতি, স্ট্রেস কমানোসহ স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
বিশেষ করে গরমে রোদ্রের প্রখর তাপে সব কিছু উত্তপ্ত থাকে। সেই সাথে মানুষের দেহে পানির চাহিদাও বেড়ে যায়। একারণে এর দামও বাড়িয়ে দেই বিক্রেতারা। তখন এর চাহিদা থালেও সাধারন মানুষেরা কিনে খেতে পারে না। আবার ক্রেতাদের মধ্যে কেউ কেউ দাম শুনে হাফ দিয়ে উঠছে।
নগরীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি পিস ডাবের দাম ৬০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ৮০ টাকা পর্যন্ত এমনকি ৯০টাকা গরিয়ে যায়।
শিশু হাসপাতালের সামনে এক পান-সিগারেটে বিক্রেতা জানান, তিনি পান সিগারেটের ব্যবসার পাশাপাশি ডাব বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করে থাকে। প্রতি পিস ডাবের দাম ছোট সাইজের ৭০ টাকা, মাঝারি সাইজের ৯০ টাকা, আর বড় সাইজের ১০০ টাকা। তিনি আরও বলেন, আমরা এই ডাব গড়ে ৬০ টাকা করে কিনে থাকি। এরমধ্যেও অনেকটা খারাপ থাকে। তাই কোন কোনটা বেশি দামে বিক্রি করে পুষিয়ে নেই।
শিশু হাসপাতালের পাশে আরেক ফল বিক্রেতা বলেন, সে ফলের ব্যবসার পাশাপাশি ডাব বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করে থাকে। তিনি বলেন, ডাবের চেহারা অনুয়ায়ী দাম আপ-ডাউন করে। সেই হিসাবে ডাবের দাম ৬০ টাকা, আবার কোনোটা ৭০থেকে ৮০টাকা প্রতি পিচ।
খুলনা কোর্টের সামনে ডাব বিক্রেতা সেলিনা আক্তার জানান, প্রতি পিস ডাবের দাম ছোট ৬০, মাঝারি ৭০, বড় ৮০ টাকা। পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আমরা যেমন দামে কিনি এরপর লাভ রেখে সেটি বিক্রি করি। যদি দুই পয়সা লাভ না করি তাহলে সংসার চালাবো কি করে। এমনি করোনার কারনে লকডাউন রয়েছে। তাই কাস্টমারও কম, বেচা কেনা মোটেই ভালো না।
পাশে আরেক ডাব বিক্রেতা হাফিজুল ইসলাম জানান, দিন দিন লোকসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে অনেকে জমিতে বসবাস করার জন্য অন্যান্য গাছের পাশাপাশি নারকেল গাছও কেটে ফেলছে। আবার কেউ কেউ নারকেল গাছের ফল বিক্র করতে চাই না। তাই এখন ডাবের সংকট। দাম বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে।
নগরীর নিউমার্কেটে ডাব বিক্রেতা সাইদুল ইসলাম জানান, ডাবের দাম ৬০ টাকা, ভালো পানি হবে ৯০টাকা। নিলে নেন, একদাম। এমনিতেই গাছে ফল কম। পাওয়া যাচ্ছে না, তাই দাম বেশি।
বাগেরহাটর ফকিরহাট উপজেলার ভাঙ্গন ফর দিয়াপাড়া গ্রামের নজরুল মল্লিক জানান, তিনি গ্রাম থেকে ডাব নিয়ে এসে নগরীতে পাইকারী দরে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে ৩৮ টাকা থেকে ৪৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে থাকে। পাইকারি গড়ে ১০০ পিস ডাবের দাম ৪ হাজার টাকা। এখন গাছে ফল কম। বৃষ্টি বাদল নেই। তাই বেশি দাম দিয়ে গাছ মালিকদের কাছ থেকে কিনতে হচ্ছে।
শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক শিশুর বাবা আলমগীর হোসেন জানান, এখানে অনান্য জায়গার তুলনায় ডাবের দাম বেশি। এক দাম ৭০ থেকে ১০০ টাকা। নিলে নেন না নিলে আগে যান কলে তারা। আমি এখান থেকে ডাব কিনেছি ৮০ টাকা করে। ডাবের দাম যদি হয় এত, তাহলে তো কিনে খাওয়া সাধ্যের বাইরে। আগে ৫টা ডাবের দাম ছিলো ১৬০ টাকা সেই ডাবের দাম এখন ৪০০টাকা। কিন্তু কি করার বাধ্য হয়ে তৃষ্ণা নিবারণের জন্যই কিনে খেতে হচ্ছে।
খুলনা জজ কোর্টে চাকুরিজীবী আমির হোসেন বলেন, শরীরটা ভালো নেই। বেশ কিছুদিন ধরে দুর্বল অনুভব করছি। তাই ডাক্তার বলেছে প্রতিদিন ডাব খেতে। কিন্তু ডাবের যা দাম, বিপদে আছি।

(ঊষার আলো-এমএনএস)