UsharAlo logo
বুধবার, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পশুর চ্যানেলের ইনার বার ড্রেজিংয়ের বালু ডাম্পিং ইস্যুতে মুখোমুখি বন্দর কর্তৃপক্ষ-চীনা কোম্পানী ও গ্রামবাসী

koushikkln
এপ্রিল ৫, ২০২১ ৫:৪১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মোঃএরশাদ হোসেন রনি, মোংলা : মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের ইনার বার ড্রেজিংয়ের বালু ডাম্পিং ইস্যুতে চীনা কোম্পানী, বন্দর কর্তৃপক্ষ ও গ্রামবাসী মুখোমুখী অবস্থান নিয়েছে। কৃষি (ধান) জমি ও মৎস্য (বাগদা চিংড়ি) ঘেরের ক্ষতিপূরণ না দিয়ে জোরপূর্বক ডাইক নির্মাণ ও বালু ডাম্পিং প্রচেষ্টার অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, ফসলি জমি ও জলাভূমির শ্রেণী বিন্যাশে হুমকির মুখে পড়বে জীববৈচিত্র্যসহ স্থানীয়দেও জীবন-জীবিকা। আর চলতি ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মৌসুমে উড়ো বালুর আগ্রাসনে বসবাসের অনুপযোগী পরিবেশের শংকায় চরম হতাশার মধ্যে পড়েছেন শত শত গ্রামবাসী। তাদের দাবী, বন্দর কতর্ৃপক্ষ ও চীনা কোম্পানি পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই নামমাত্র ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়ে ফসলি জমি এবং মৎস্য ঘেরে বালু ডাম্পিং প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। এ অবস্থায় জমির মালিকসহ সাধারণ মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন।
সোমবার (০৫ এপ্রিল) সকাল ৯ টায় থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত স্থানীয় নারী-পুরুষসহ শত শত গ্রামবাসী তাদের ফসলি জমি ও চিংড়ি ঘেরে রক্ষার দাবীতে সমবেত হন পশুর নদীর তীরবতর্ী চিলা ইউনিয়নের সুন্দরতলা এলাকায়। এ সময় মানববন্ধন সমাবেশসহ সংবাদ সম্মেলনে গ্রামবাসীর পক্ষে মোঃ আলম গাজী লিখিত বক্তব্যে নানা অভিযোগ উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, বন্দর কতর্ৃপক্ষ ও ড্রেজিং কাজে নিয়োজিত চীনা কোম্পানী জমির মালিকদের কিছু না জানিয়ে কৃষি জমি ও মৎস্য ঘের শুকিয়ে বালু ডাম্পিং করার জন্য গত দুথসপ্তাহ ধরে ডাইক নির্মাণ শুরু করেছে। পরে তারা এ বিষয় আপত্তি জানালে ১০ বছরের ক্ষতিপূরণ দেয়ার আশ্বাস দিয়ে আসছে বন্দর কতর্ৃপক্ষ। কিন্তু কৃষি-মৎস্য ঘেরের জমিতে বালু ডাম্পিং করা হলে জীবন-জীবিকার উৎস বন্ধ হবে। গ্রামবাসীরা জানান, যে জমিতে তারা ধান উৎপাদন করেন সেই একই জমিতে মৎস চাষ করে সংসার চালাতে হয় তাদের। তাই ধান উৎপাদন ও মাছের চাষ বন্ধ হলে বেকারত্বসহ পথে বসবে অসংখ্য পরিবার। এছাড়া বালু ভরাটের কারেণ আগামী ৫০ বছরের জন্য চরম দূরাবস্থা এবং আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হতে হবে স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাই ফসলি-মৎস্য চাষের জমিতে নদী ড্রেজিংয়ের বালু ডাম্পিংয়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন জমির মালিক ও গ্রামবাসী। আর এ জন্য কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দিয়েছেন তারা। এ অবস্থায় বন্দর কতর্ৃপক্ষ, চীনা ড্রেজিং কোম্পানী ও এলাকাবাসী মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে বাপাথর বাগেরহাট জেলা সমন্বয়কারী নুর আলম শেখ বলেন, সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের মতামত নিয়ে প্রকল্প গ্রহণ করা উচিৎ। আলোচনা ছাড়াই প্রকল্প গ্রহণ ঠিক হয়নি। জমির মালিকদের যে ১০ বছরের ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেয়া হয়েছে সে ক্ষেত্রে জটিলতা রয়েছে। এছাড়া দীর্ঘ সময়ের জন্য ফসলসহ পরিবেশগত ক্ষতির মুখে পড়বেন ফসলি জমির মালিকসহ জনসাধারণ।
এ বিষয় মোংলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার কমলেশ মজুমদার বলেন, ড্রেজিং প্রকল্পের বালু ডাম্পিং করার জন্য ১০ ফুট উচ্চতার ডাইক নির্মাণ ও ৮ ফুট পর্যন্তু বালু ভরাট করার কথা থাকলেও অতিরিক্ত উচ্চতায় করা হচ্ছে। এছাড়া এলাকাবাসীর উত্থাপিত নানা অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা ভূমি কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে সরেজমিন পরিদর্শনে অনেক অসংগতি পাওয়া যায় সেখানে। এ সকল বিষয় জেলা প্রশাসককে অবগত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
মোংলা বন্দর কতর্ৃপক্ষ সূত্র জানায়, ৭শথ৯৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের ইনার বার ড্রেজিং প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। আর ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ পেয়েছে চীনা কোম্পানী। গত ১৩ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে এ নদী খননের কাজ। নদী খননের বালু ডাম্পিং করার জন্য ১ হাজার একর ফসলি জমি ও মৎস্য ঘেরের জমির ক্ষতিপূরণ দিয়ে তারপর সেখানে বালু ফেলার কথা রয়েছে। বালু ফেলার জন্য ব্যক্তি মালিকানা ছাড়াও প্রায় ৫শথ একর সরকারী খাস জমি চিহিৃত করা হয়েছে।
নদীর বালু ডাম্পিং বিষয়ে মোংলা বন্দর কতর্ৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল ও হাইড্রোলিক) ড্রেজিং প্রকল্প কর্মকর্তা শওকত আলী বলেন, জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে জমির প্রকৃত মালিক ও ক্ষতিগ্রস্থদের ১০ বছরের জন্য ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। এক্ষেত্রে তালিকা প্রণয়নসহ প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রয়েছে। শিগগিরই প্রকৃত জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদাণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, সুবিধা ভোগীরা এ নিয়ে নানা চক্রান্ত করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।