UsharAlo logo
শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

কঠোর লকডাউন বাস্তবায়ন : আলোচনায় পুলিশের বিচারিক ক্ষমতা

koushikkln
মে ১৫, ২০২১ ১০:২০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো ডেস্ক : করেনাকালে লকডাউনের কঠোর বাস্তবায়নে পুলিশকে বিচারিক ক্ষমতা দেয়ার বিষয়ে নানা অভিমত উঠে আসছে। সংশ্লিষ্ট আইনজীবী, পুলিশ ও মানবাধিকারকর্মীরা এ নিয়ে নানা মন্তব্য করেছেন। কেউ বলেছেন, পুলিশকে কিছুক্ষেত্রে বিচারিক ক্ষমতা দিতে হবে। এতে লকডাউন বাস্তবায়নে তারা কঠোর হতে পারবে। আবার কেউ কেউ বলেছেন, পুলিশকে বিচারিক ক্ষমতা দিলে ক্ষমতার অপব্যবহার ঘটবে।
মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, ‘পুলিশ হচ্ছে আদেশ বাস্তবায়নকারী সংস্থা। যারা আদেশ বাস্তবায়ন করে, তাদেরকে যদি বিচারক দায়িত্ব দিয়ে দেন, তাহলে যে ভারসাম্য আছে, সেটা নষ্ট হয়ে যাবে। পুলিশের ওপর এমনিতেই মানুষের একটা সন্দেহ ও অনাস্থা রয়েছে। পুলিশকে যদি এই বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া হয়, তাহলে এক ধরনের বিপর্যয় হতে পারে। ভারসাম্য রক্ষা করাটা কঠিন হবে। দুর্নীতি বাড়বে। আস্থার সংকট বৃদ্ধি পাবে। রাস্তাঘাটে তল্লাশির নামে পুলিশ যা করে, সেটা তো আমরা জানি। তাই এই সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে সরে আসতে হবে। না-হলে সংকট আরও তৈরি হবে। পুলিশকে বিচারিক ক্ষমতা না দিয়ে সেনাবাহিনী দিয়ে টহল দেওয়ানো যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারকে কঠোর ঘোষণা দিতে হবে যে, যাদেরকে মাস্কবিহীন দেখা যাবে, তাদেরকে অর্থদ- ও কারাদ- দেওয়া হবে। বিভিন্ন জায়গায় ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে জরিমানা ও তাৎক্ষণিক বিচারের ব্যবস্থা যদি কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে জনগণ মানতে বাধ্য হবে। একেক সময় একেক ঘোষণা না দিয়ে, সরকার যদি সুনির্দিষ্টভাবে কঠোর বার্তাটা দিতে পারে, তাহলে অবশ্যই আদেশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। সরকারের একেক সময় একেক ঘোষণার কারণে মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছে এবং ঈদের সময় তারা গ্রামমুখী হয়েছে। তাছাড়া কখনও কখনও কিছু মানুষ মনে করেছে— এটা সরকারের রাজনৈতিক কৌশল। কোনও মহল যেন প্রতিবাদ করতে না পারে, সে জন্য সরকার এই ব্যবস্থা নিয়েছে।
আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুলিশকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া আছে। যেমন- ট্রাফিকের ক্ষেত্রে তারা জরিমানা করতে পারে। এখন যদি ১৬ মে থেকে কঠোর লকডাউন দেওয়া হয়, আর সেটা বাস্তবায়নে পুলিশকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া হয়, সেটা দিতে পারে। তবে আমি মনে করি, পুলিশকে বিচারিক ক্ষমতা না দিয়ে সেনাবাহিনী নামিয়ে তাদের যদি ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়া হতো, তাহলে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে মনে হয়— এটার সঠিক ব্যবহার হতো।
সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ‘পুলিশকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ার বিষয়ে যারা সমালোচনা করেন, তারা আইন-কানুন বুঝেন না। বিধি-বিধান সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান তাদের নেই। সরকার এখন যে কাজগুলো করছে কোনটা বিধিসম্মত হচ্ছে, আপনি মানুষকে চলাচলে বাধা দিতে পারেন? এটাতো তার সাংবিধানিক অধিকার। একজন নাগরিক যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাবে। তাকে আপনি বাধা দিতে পারেন না। সে তার কাজকর্ম করবে, ব্যবসা-বাণিজ্য করবে, সেগুলোতে বাধা দিতে পারেন না। আর তাদের বাধা দিতে হলে নির্দিষ্ট একটা আইন থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘কিছু ক্ষেত্রে যখন পুলিশ সমাবেশ করতে দেয় না, রাস্তা বন্ধ করে, সেসব ক্ষেত্রে একটা আইন আছে। ঠিক একইভাবে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন-২০১৮ নামে একটা আইন আছে। সেখানে যে বিধিনিষেধগুলো আছে, সেটার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজিকে। সেটা কেবিনেট কিংবা জনপ্রশাসনকে দেওয়া হয়নি। আপনি একটা আইন করলেন— মাস্ক না পড়ে আপনি চলতে পারবেন না, গাড়ি বের করতে পারবেন না। তাহলে সেখানে কি পুলিশকে রাখা হয়েছে? সংক্রামক রোগ আইনে পুলিশের ন্যূনতম ক্ষমতা নেই।’
সাবেক এই আইজিপি বলেন, ‘একটা লোক মাস্ক পরলো না, তখন পুলিশ কোন আইনে তাকে বাধা দেবে। সরকার যদি মনে করে, বিধিনিষেধগুলো বলবৎ বা বাস্তবায়ন করতে হবে, তখন পুলিশকে ক্ষমতা দিতে হবে। পুলিশ ছাড়া এগুলো বাস্তবায়ন করার সামর্থ্য ও ক্ষমতা আর কারও নেই। একমাত্র পুলিশই এই সরকারি আদেশগুলো বাস্তবায়ন করবে।
সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন