UsharAlo logo
বুধবার, ১৭ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

করোনার বেতাঘাতে ফেরীওয়ালা হালিমের জীবন কাটছে দুর্দিনে

usharalodesk
মে ৩, ২০২১ ৫:০৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো প্রতিবেদক : হালিম গোলদার (৪০)। সেই ১০ বছরের স্কুলের বারান্দায় পা না দেওয়া বালকটির আজ ৪০ বছর বয়স চলছে। দারিদ্রতা আর বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যদের মুখে মোটা ভাত আর আলু সিদ্ধোর যোগানে তাকে জীবনে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে স্কুলের বারান্দার থেকে নামিয়ে এনেছে রাস্তায়। সেদিনের সোনালী স্বপ্ন দেখা স্কুলে পড়া বালকটি আজ পেটের তাগিয়ে ছাত্র পরিচয়ের বিপরীতে সমাজে পরিচয় লাভ করেছে সামান্য ভ্রাম্যমান ফেরিওয়ালাতে। তার এ ৪০ বছরের জীবনে থেকে থেকে ঘাত-প্রতিঘাতের মুখে পড়ে ঠকতে ঠকতে তার  জীবনের ফেলা আসা করুন ইতিহাস আজও তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।

পিতৃনিবাস নড়াইল জেলার লোহাগড়ার লক্ষিপাশা গ্রামে। পিতা মৃত কুদ্দুস গোলজার। পিতার ছিলো বেশ জমি। কিন্তু চাচা আর চাচাতো ভাইয়েরা মিলে তাদের সরল মনের উপর নিষ্ঠুর বুল্ডোজার চালিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে পিতার সকল সম্পত্তি। যে কারণে এই অসহায় পরিবারটি পিতার নিবাস ছেড়ে আজ প্রায় ত্রিশ বছর যশোর জেলার ফুলতলা উপজেলার নদীর ওপারের ধূলগ্রামে নদীরপাড়ে অবদার জমিতে স্ইুজগেটের পরিত্যাক্ত ভবনে বসবাস করছে। বাড়ীতে মা আছে, আছে ভাইবোন।

হালিম স্ত্রী আর দুই মেয়েকে নিয়ে ঝিনাইদাহ কালিগঞ্জের কাশিপুর গ্রামে বসবাস করে। তার দুই মেয়ে রাবেয়া আর বৃষ্টি বাড়ীতে বসে থাকলেও স্ত্রী মালঞ্চ স্বামীর মতোই ফেরি করে বেড়ায় ঝিনাইদাহের বিভিন্ন  গ্রামে গ্রামে। হালিম এই ফেরি করে বিভিন্ন জেলা সমূহে। তবে বৃদ্ধ মা ফুলতলাতে থাকার কারণে সে ঝিনাইদাহ হতে সবচেয়ে বেশি পা রাখে খুলনার বিভিন্ন অঞ্চলে। বিশেষ করে, দৌলতপুর, শাহাপুর হাটে, জামিরা বাজার, খালিশপুর, শিরোমনি, দিঘলিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলে। তবে বেশি আসে দৌলতপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে। মাথায় একটা প্লাস্টিকের ঝাঁকা আর হাতের ডানপাশে একটি হ্যান্ড মাইক। মাথার ঝাঁকায় রয়েছে, বিভিন্ন পোকা দমনের ঔষুধসহ চিড়নি, বাচ্চাদের নজর কাটাসহ ইলেকট্রিক কিছু সামগ্রী। তিনি জানান, মাত্র ১৫শ টাকার পুঁজি নিয়ে ব্যবসায় নামেন তিনি। তবে হ্যাঁ, এ কথা সত্য আমার ব্যবসার ধরণ অনেকটাই ডাকাতির মতো। ২০ টাকার মাল আমি অধিক লাভের জন্য ৫০ হতে ৭০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে থাকি। দিন শেষে বাড়ীতে ফেলার সময় খরচ খরচা বাদে প্রায় ৩০০ হতে ৪০০ টাকা লাভ করে বাড়ীতে ফিরি। তাছাড়া স্ত্রীও চেষ্টা করে আমার দুঃখ কিছুটা হলেও লাঘব করতে। তবে করোনার কারণে যানবহন বন্ধ থাকায় বর্তমানে আমার দুর্দিন যাচ্ছে। তিনি আরো জানান, বর্তমানে লকডাউনের কারনে বাড়ীতে, ফুটপথ বা হাট-বাজারে কেনাবেচা নেই, নেই কাংক্ষিত কাস্টমার। তবুও পরিবারের কথা ভেয়ে পা নামক গাড়িতে করে সে সর্বত্র ছুটে বেড়ায় এদিক থেকে ওদিকে। তিনি দুঃখ করে বলেন, করোনা আমাদের মতো গরীবকে একমারে মেরে ফেলুক না। এই জীবনে দরিদ্রতার কষাঘাতে ধুকে ধুকে মরার চেয়ে একবার মরে যাওয়া অনেক ভালো। তিনি জানান, করোনা শুরু হতে আমার এলাকার চেয়ারম্যান বিভিন্ন সময়ে ত্রান আমাদের উদ্দেশে দিলেও তার নেতারা আর আমাদের পর্যন্ত পৌচ্ছাতে দেয়নি। পায়নি কোন সরকারি বা বেসরকারি সহয়তা। তবে হ্যাঁ, ঈদের সময় সেমাই চিনি পেয়েছিলাম। সামনে ঈদ জানিনা আদরের মেয়ে বা স্ত্রীকে সস্তা বা ফুটপাথের হলেও নতুন কাপড় এ বছর কিনে দিতে পারবো কিনা। তবে দীর্ঘ সেই ১০ বছর বয়স হতে মাথায় ঝাঁকা নিয়ে ফেরী করলেও ভিক্ষা বা কারো কাছে হাত পেতে খায়না। এটাই আমার গর্ব। আমার পরিবার দুদিন পরে খেলেও সৎ টাকায় খায় এটাই আমার আত্ব অহংকার বলে তিনি জানান।

(ঊষার আলো-আরএম)