UsharAlo logo
শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

করোনায় ভালো নেই মুড়ি বিক্রেতা জাহিদ

koushikkln
এপ্রিল ১৩, ২০২১ ১১:৩২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

উষার আলো প্রতিবেদক : মোঃ জাহিদ হোসেন (৪৫)। শারীরিকভাবে তিনি একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে তাঁর পরিবার। প্রায় ২০ বছর আগে সন্ত্রাসী হামলায় তার ডান পা’টি সম্পূর্ণ কাটা পড়ে। বর্তমান বসবাস ঐতিহ্যবাহী দেয়ানা গ্রামের মোল্লাপাড়ার মাথায়। এলাকার সকলেই তাকে সমীহ করে ঝাল-মুড়ি জাহিদ ভাই বলে ডাকে। পা হারানোর দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর শারীরিকভাবে সুস্থ হওয়ার হয়ে তিনি সম্পূর্ণ বেকার হয়ে পড়েন। বালিশে মাথা রেখে রাতে ঘুম হয় না তার। জীবন কিভাবে কাটবে সে? পেট কি ভাবে চলবে? এক সময় সিদ্ধান্ত নেন ভ্রাম্যমান ভ্যানে মুড়ি বিক্রয় করবে। শুরু হয় তার এক পা নিয়ে জীবন-জীবকার সংগ্রামী জীবন যুদ্ধ।
নিজে শিক্ষিত না হলেও তাঁর ছেলে-মেয়েদের ঘিরে। মুড়ি বিক্রিতার পরিচয়ে বড় না হয়ে তারা যেন নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া শিখে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারে। ছেলে বর্তমানে একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে মানিকতলার জিয়া মহাবিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে। বড় মেয়ে দেয়ানা মহিলা দাখিল মাদ্রাসায় দশম শ্রেণির ছাত্রী। তবে দেশে বিদ্যামান করোনা মহামারী আর বর্তমান বেড়ে যাওয়া করোনা প্রার্দুভাবে তার জীবন জীবিকা চলানো সম্পূর্ণ দুষ্কর হয়ে পড়েছে। অভাব-অনটনে কোন রকম একটি দিন পার করছেন জাহিদ। নেই কাঙিক্ষত কেনাবেচা। পরিবারের বর্তমান অবস্থা নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো।
জাহিদ বলেন, আমার ডান পা নেই। প্রতিদিন স্ট্রেচারের উপর ভর করে ভ্যান নিয়ে বিকাল ৫টায় বের হয়ে গভীর রাতে বাড়িতে ফিরে আসি। বাসায় এসে স্ত্রী, ছেলে মেয়েকে ঘুমান্ত দেখি। যদিও সরকার প্রতিমাসে সরকার আমাকে ভাতা বাবদ ৭৫০ টাকা প্রদান করে। তবে ১০ মাসপর মাত্র দুই মাসের ভাতা পেয়েছি। আমি দৌলতপুরে ঋষিপাড়া, আঞ্জুমান রোড, পাখির মোড়, পাবলা, আড়ংঘাটা, গাইকুড়, রেলিগেট, কুলিবাগান, রেলিগেট প্রভৃতি অঞ্চলে মুড়ি বিক্রি করি। বর্তমানে লকডাউনের জন্য মেইন সড়কে উঠিনা।
করোনা চললেও মাঝে চলাচল কিছু শিথিল ছিল। তখন প্রায় প্রতিদিন মুড়ি বিক্রি করে ৮/৯০০ টাকা আয় করে বাড়ি যেতাম। কিন্তু বর্তমানে সংক্রমণ হুহু করে বেড়ে যাওয়ায় নানা সীমাবদ্ধতায় কেনাবেচা করতে হচ্ছে। বর্তমানে বাড়ি হতে নেমে বাড়ি যাওয়ার সময় ৩/৪০০ টাকা নিয়ে যাচ্ছি। যেখানে সংসারের বাজার ক্রয়, ওষুধ, ছেলে মেয়ের লেখা পড়ার খরচ লাগে ৭০০ টাকার মতো। এক কথায় করোনা মহামারীর এই দুর্দিন আর লকডাউনে আমি বলতে গেলে মানবেতর জীবন যাপন করছি। তবে কারো কাছে হাত পাতি না। প্রতিবন্ধী হলেও কর্মকরে খায়। যদিও সরকার প্রতিমাসে সরকার আমাকে ভাতা বাবদ ৭৫০ টাকা প্রদান করে। তবে ১০ মাসপর মাত্র দুই মাসের ভাতা পেয়েছি। তবে শুনেছি আমাদের জেলা প্রশাসক সাহেব অনেক দয়ালু আর ভালো মানুষ। এ দুর্দিনে যদি তিনি আমার প্রতি এক সুনজর দেন তবে আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবো এটাই প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হিসাবে আমার যাওয়া।
ব্যবসায়ী রাশিকুল আনাম রাশু বলেন, জাহিদ ভাই আমাদের গ্রামের পরিচিত মুখ। তিনি প্রতিবন্ধী হলেও অনেক সহজ, সরল আর রুচিশীল মানুষ। তিনি প্রায়ই সন্ধ্যায় কল্পতরু মার্কেটের সামনে মুড়ি বিক্রি করতে আসেন। তিনি প্রতিবন্ধি ব্যক্তি হলেও কারো কাজে হাত পাতেন না এটাই তার বড় বৈশিষ্ট। তবে করোনায় তিনি অনেকটাই ভেঙে পড়েছেন।