UsharAlo logo
শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

খালিশপুরে লিটন হত্যা মামলায় ধোঁয়াশায় নিহতের পরিবার

usharalodesk
এপ্রিল ২৬, ২০২১ ৯:২৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট : নগরীর খালিশপুরে চা দোকানদার মোঃ লিটন শেখ (৪২) হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় আসামী করা, ধরা ও ছাড়া নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যে নিহতের পরিবার। যারা আসামী হওয়ার কথা ছিল তারা কেউ-কেউ আসামী হয়নি। যারা আসামী হওয়ার কথা ছিল না তারাও কেউ আসামী হয়েছে। আবার ঘটনার সাথে জড়িত এমন কাউকে গ্রেফতারের পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এসব বিষয় মামলার বাদী ও স্বজনরা সবাই অন্ধকারে। এলাকার একটি প্রভাবশালী মহলের নীল নকশায় খুন হয় মাদক বিরোধী যুবক লিটন। অথচ ঘটনার পর তারাই থানায় উপস্থিত থেকে আসামী করা থেকে শুরু করে সব কিছুই করেছে একটি মহল। এমনই অভিযোগ নিহতের স্বজনদের। নিহতের বড় ভাই শহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর আমরা লাশ গ্রহণের জন্য হাসপাতালে অপেক্ষার প্রহর গুনছি। সবার মন ভারাক্রান্ত। কারো মাথায় কাজ করছিল না। লাশ দাফন কাফনের পর পরিবারের সবার সাথে আলোচনা করে মামলা করার চিন্তা ছিল। কিন্তু পুলিশ মামলা না হলে লাশ মর্গ থেকে দেয়া যাবে না-এমনই অজুহাতে শেষ পর্যন্ত কুচক্রীমহলের সাজানো নকশায় এজাহারের কাগজে স্বাক্ষর করেন নিহতের স্ত্রী হেলেনা বেগম। এ সুযোগে এলাকার প্রভাবশালী মহল আমার ভাইয়ের লাশ পুঁজি করে ব্যক্তি শত্রু দমনে সুযোগে নেয়। আর মহলটি নিজেদের লোকদের রক্ষা করেছে। বাদি হেলেনা বেগম জানান, আমি মামলায় কারো নাম দেইনি। পুলিশ গ্রেফতারের পর আসামীরা যাদের নাম বলেছে পুলিশ এজাহারে তাদের নাম দিয়েছে। সাতজন গ্রেফতারের পর আর একদিনের জন্যও পুলিশ নিহতের পরিবারের পাশে যায়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন। নিহতের ছোট ভাই আল আমিন বলেন, পুলিশ যাদের গ্রেফতার করেছে তারা ঘটনার মূল আসামী নয়। মূল আসামী পুলিশ এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি। চুনো পুটি গ্রেফতার করে পুলিশ বাহবাহ নিচ্ছে। এলাকার মোকসেদ নামের এক ব্যক্তি দু’ ছেলেকে ঘটনার পরে পুলিশ গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। ওই সময় যাদের গ্রেফতার করা হয় সবাইকে মামলার আসামী করা হলেও তাদের দু’জনকে করা হয়নি। এদের বড় ভাইকে স্বসম্মানে পুলিশ ছেড়ে দেয় আর ছোট ভাইকে রিয়াজ মুন্সীকে মামলার স্বাক্ষী করা হয়েছে। এতসব পুলিশ করেছে কিন্তু বাদী বা তার স্বজনদের সাথে কোন ধরণের আলোচনা ছাড়াই। পুলিশ যা করছে ওই প্রভাবশালী মহলের সাজানো নকশায় করছে। ঘটনার দিন দুপুরে খুমেক হাসপাতালের মর্গে সামনে স্বজনদের লাশ গ্রহণের অপেক্ষা প্রহণ গুনতে দেখা যায়। এ সময় খালিশপুর থানার অফিসার্স ইনচার্জ কাজী মোস্তাক আহমেদের সাথে কথা হলে তিনি জানান, মামলা ছাড়া লাশের সুরোতহাল ও ময়নাতদন্ত কোনটাই হবে না মর্মে নিয়ম হয়েছে। তাই মামলা শেষে লাশ স্বজনদের দেয়া হবে। এ ব্যাপারে কথা হয় বিশিষ্ট আইনজীবী এড. বাবুল হাওলাদারের সাথে। তিনি বলেন, লাশ মাটির ওপরে রেখে মামলা করতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। নিহতের স্বজনরা ইচ্ছা করলে লাশ দাফন কাফনের পর মামলা করতে পারেন।
খালিশপুর থানায় দায়েরকৃত মামলাটি তদন্ত করছেন খালিশপুর থানার অফিসার্স ইনচার্জ (তদন্ত) নিমাই চন্দ্র কুন্ডু। তিনি বলেন, এ ঘটনায় লিটনের স্ত্রী হেলেনা বেগম বাদী হয়ে খালিশপুর থানায় জয়নাল, শাহাদৎ, আজা লিটন, রাজু, রোকন, আল আমিন, আসলাম, টিক্কি রুবেল, আকিব, সাকিব, আব্দুল্লাহ, এলকো সোহেল, গরু মামুন, মাড়ুয়া আল আমিন, হেলাল, সাব্বির, মোঃ মাহির, বাবু, আশিকুর রহমানসহ মোট ১৯ জনের নামে এজাহার করেছেন। মামলায় আরো ১০/১৫ জনকে আজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে এজারভুক্ত সাত আসামীকে গ্রেফতার করেছে। এরমধ্যে পাঁচজনকে রিমান্ড শেষে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। রিমান্ডে থাকা আসামীরা হলো উত্তর কাশিপুর কবরখানা রোড মহির বাড়ির ভাড়াটিয়া আলামিন(২৪), উত্তর কাশিপুর মুরাদের বাড়ির ভাড়াটিয়া মৈল-এর ছেলে আব্দুল্লাহ(৩৯), উত্তর কাশিপুর হোসেনের ছেলে হেলাল(২০), কাশিপুর পদ্মারোড তেতুলতলার মোড় হেমায়েত ডাক্তারের বাড়ির ভাড়াটিয়া মনির হোসেনের ছেলে মোঃ মাহির (২১) ও দৌলতপুর দেয়ানা মোল্লাপাড়ার বাসিন্দা মৃতঃ বাদশা মিয়ার ছেলে আশিকুর রহমান (১৯)। তিনি আরো জানান, দু’আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। তারা হলো-নগরীর বাস্তুহারা ১২নং রোডের বাবুল শেখের ভাড়াটিয়া বাবু শেখের ছেলে রাজু (২৪) ও উত্তর কাশিপুর বাইতিপাড়া রেল লাইন এলাকার লোকমান শেখের ছেলে আসলাম (২০)। তিনি বলেন, নতুন করে কোন গ্রেফতার নেই। বাদী নিজে এজাহার দিয়েছে এবং তিনি নিজেই্ স্বাক্ষী দিয়েছেন। এখানে পুলিশের কোন ভূমিকা ছিল না বলে তিনি দাবি করেন।
উল্লেখ্য, ১৭ এপ্রিল দিনগত রাত ১টার দিকে লিটনকে কয়েকজন ফোন করে ডেকে নেন। এ সময় তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে লিটন ও আমিনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করেন। তাদের চিৎকারে স্বজনরা ছুটে এসে লিটন ও আমিন উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক লিটনকে মৃত ঘোষণা করেন।

(ঊষার আলো-এমএনএস)