ঊষার আলো রিপোর্ট : খুলনায় করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আসন সঙ্কট দেখা দিয়েছে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে। এ হাসপাতালে কোভিড আক্রান্তদের সেবা নিশ্চিত করতে সম্প্রতি বাড়ানো হয়েছে শয্যা ও আইসিইউ বেডের সংখ্যা। কিন্তু সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে কোভিড আক্রান্ত ও মৃত্যুহার বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালগুলোর আসন সঙ্কট চরম আকারে পৌঁছেছে। এমনকি একজন নতুন রোগীকে ভর্তির জন্য অন্য রোগীর মৃত্যুর অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।
শনিবার (৫ জুন) খুলনা করোনা হাসপাতালে ৪ জনের মৃত্যু হয়। এর আগে শুক্রবার (৪ জুন) সন্ধ্যায় মাত্র ৪০ মিনিটের ব্যবধানে মৃত্যু হয় দু’জনের। আবার রাত সাড়ে ১১টার পর মাত্র ২০ মিনিটের ব্যবধানে মৃত্যু হয় দু’জনের। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রতিনিয়ত বৈঠক করছেন পরিস্থিতি সামাল দিতে। করোনা হাসপাতালের দ্বিতীয় ইউনিট করার বিষয়টিও ভাবা হচ্ছে।
খুমেকের করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে ২০টি আইসিইউ, ১০টি এইচডিইউ এবং রেডজোন ও ইয়োলো জোনে ৭০টি বেড রয়েছে। গত ৩০ মে থেকে পূর্ণাঙ্গরূপে ১০০ বেড নিয়ে যাত্রা শুরু করে হাসপাতালটি। এর আগে আইসিইউ’র মাত্র ১০টি বেড ছিল। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ ১০০ বেড নিয়ে যাত্রা শুরুর পর থেকেই রোগীর পরিমাণ ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। করোনা হাসপাতালের প্রতিদিনকার চিত্রে দেখা যায়, ৫ জুন সকালে ছিল ১১৩জন রোগী, ৪ জুন ছিল ১১০ জন, ৩ জুন ছিল ১১৫ জন, ২ জুন ছিল ১০৯ জন এবং ১ জুন ছিল ৯৯ জন। অর্থাৎ ১০০ বেডের এ হাসপাতালে অতিরিক্ত ২০টি বিছানা দিয়েও রোগীদের ঠাঁই দেয়া যাচ্ছে না।
করোনা হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, “কালিয়ার আমিনুর রহমান মোল্লা ৩১ মে ভর্তি হয়ে ৪ জুন ভোর ছয়টায়, শরণখোলার নূরুল ইসলাম শুক্রবার ভর্তি হয়ে শনিবার সকাল পৌনে ১০টায়, মোড়েলগঞ্জের মিজানুর আকন ২৮ মে ভর্তি হয়ে ৫ জুন বেলা পৌনে ১২টায় এবং নগরীর রায়পাড়ার রেহেনা বেগম ৫ জুন ভর্তি হয়েই দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে শুক্রবার দিনগত রাতে ভর্তি হয়ে রাত ১১টা ৩৫ মিনিটের সময় মৃত্যুবরণ করেন যশোরের ঝিকরগাছার শহিতন বিবি এবং ২৯ মে ভর্তি হয়ে ৪ জুন দিবাগত রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন, নগরীর দৌলতপুরের গৌরাঙ্গ সাহা।
খুমেকের আরটি পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা শুরুর পর গত ২/৩ দিন ধরে শনাক্তের হার অনেক বেড়ে গেছে। ৪ জুন কিছুটা কম থাকলেও ৩ জুন করোনা শনাক্তের হার ছিল ২৯%। যদিও ৫ জুন হার কিছুটা কমে দাঁড়ায় ১৭.৩৭ %।
মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মো: মেহেদী নেওয়াজ বলেন, ৫ জুন খুলনা ল্যাবে ২৮২টি নমুনা পরীক্ষার পর ৪৯ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর মধ্যে খুলনারই ছিল ৩৯ জন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. রাশেদা সুলতানা জানান, বিভাগের ১০ জেলায় ৫ জুন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৫,৭৪২ জন, সুস্থ হয়েছেন ৩১,৭৫৩ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৬৬৬ জন। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক দপ্তরের দৈনন্দিন করোনা সংক্রান্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, খুলনা বিভাগে ৫ জুন ছয়জন, ৪ জুন চারজন, ৩ জুন তিনজন, ২ জুন পাঁচজন এবং ১ জুন তিনজনের মৃত্যু হয়।
(ঊষার আলো-এমএনএস)