UsharAlo logo
শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নগরীতে করোনার চেয়ে বেশী ভয় এনজিও ঋণে

koushikkln
জুন ১১, ২০২১ ১১:০৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো প্রতিবেদক : নগরীর দৌলতপুর আঞ্জুমান রোডের মাথায় মিনাক্ষীর মোড় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি রিক্সা ফুটটি উঠিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে রিক্সা চালক রবিউল; দিনটি বৃহস্পতিবার। সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার সমিতির কিস্তি তার । বর্ষায় ফুট উঠিয়ে বসে থাকা। কারণ রাস্তায় যাত্রীর সাড়া নেই। বাড়িতে ফিরেই সংসার খরচ আর মরণব্যাধি সমিতির কিস্তির ধার পরিশোধ কথার টাকা।
তিনি জানান, শুনি চারিদিকে করোনা হচ্ছে, মানুষ করোনার কথার শুনলে ভয় পাচ্ছে। করোনা তো মৃত্যু দিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে। কিন্তু করোনার চেয়ে বড় ভয়াবহ ব্যাধি হল এনজিও গুলো কিস্তি, কারণ মরলেও অন্যত্র কাউকে কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে হবে। সম্প্রতি করোনার প্রকোপে নগরীর দৌলতপুরে সমাজের তৃনমূল পর্যায়ের মানুষগুলো কুলি, দিনমুজুর, রিক্সাওয়ালাসহ খেটে খাওয়া মানুষ গুলোর দিন কাটছে চরম অভাব আর দুর্দিনে। তারপর পরিবাবের সদস্যদের রুটি রুজি জুটবে কিনা তা ভুলে গেলেও সমিতির কিস্তির টাকা যোগাড় করে ঘরে ফিরতেই হবে। তা না হলে গলমন্দ, কিস্তি নেয়ার সময় মনে ছিল নাসহ অনেক ভদ্র কথা ফ্রি। এ সকল মানুষের কাছে বর্তমানে করোনার আতংকের চেয়ে বড় আতংক এনজিওগুলোর কিস্তি। টানা লকডাউন আর করোনাঘাতে কর্মহীন হয়ে পড়েছে সমাজের নিম্নআয়ের সাধারণ মানুষ। তারপর আবার ঘাড়ের ওপর রয়েছে এনজিও সংস্থাগুলোর ঋণের বোঝা।
সূত্রে পাওয়া, চলতি বছরের ১২ এপ্রিল মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে, যেখানে আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সকল সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েঝে। পরে প্রজ্ঞাপনের সময়সীমা বাড়িয়ে পর্যায়ক্রমে ৫ মে, ১৬ মে ও ৬ জুন থেকে ১০ দিন বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ। কিন্তু সরকারের মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের এ নির্দেশনার সাথে নগরীর দৌলতপুরস্থ বিভিন্œ এলাকায় এনজিও গুলোর কিস্তি আদায়ের ক্ষেত্রে উল্লেখিত নিয়মের বাস্তবে কোন মিল নেই, এমনই একাধীক কিস্তি নেয়া গ্রহীতার বক্তব্য। এনজিও বা ুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে যেসব ুদ্র উদ্যোক্তা দিন সহ খেটে খাওয়া মানুষ বিভিন্ন এনজিও হতে ঋণ গ্রহণ করেছে, সংস্থার কর্মকর্তাদের চাপে করোনার এই দুর্দিনে কিস্তি পরিশোধ করতে দম বন্ধ হয়ে আসছে। নগরীর দৌলতপুরে রয়েছে বেশ কয়েকটি এনজিও’র ব্রাঞ্চ অফিস। এগুলোর মধ্যে ব্র্যাক, আশা, ব্যাুরো বাংলাদেশ, জাগরণী চক্র, সিএসএসসহ আরো বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য। তবে বর্তমান সময়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়েছে লোকাল দৈনিক আদায়ের কয়েকটি সংস্থা।
দৌলতপুর কেসিসি’র মার্কেটের ব্যবসায়ী আসাদ জানান, ব্যবসার উন্নয়ণের জন্য মাসিক কিস্তির টাকা দেওয়ার চুক্তিতে কিস্তি নেন। কিস্তি নেয়ার একের পর এক সরকার ঘোষিত লকডাউন আর কঠোর বিধি-নিষেধ। দোকান মালামালে ভর্তি থাকলেও ব্যবসা নেই এই মহামারী সংকটে। তাই তিনবার কিস্তি না দেওয়ার দৌলতপুর শাখার ম্যানেজার আমাদে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। তার ঋণ আদায়কারী নীরব দর্শক ম্যানেজার করোনা পরিস্থিতে ব্যবসায়ীর কেনাবেচা ভালো হচ্ছে না, এ কথা বলতে অক্ষম। কারণ যদি চাকুরী চলে। আমতলার কাঠ ব্যবসায়ী লিটনের দীর্ঘদিন কাঠের কাজ নেই, তবুও ধার দিনা করে কিস্তি দিতে হচ্ছে। নইলে ছাড়ছেনা ঋণ আদায় কর্মীরা। অনেকই গ্রাহকই বলছেন, বর্তমানে এনজিও গুলো সুকৌশলে কিস্তি আদায় করছে। এটা অনেকটাই- ধরি মাছ না ছুঁই পানি।
এ অভিযোগ অস্বীকার করে ব্র্যাক এনজিও’র বিভাগীয় কো-অর্ডিনেটর মোঃ সাইদুর রহমান জানান, আমাদের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি থেকে ঋণ আদায়ে নির্দেশনা দেয়া আছে। আমরা কোন জোর জুলুম করে ঋণ আদায় করছিনা, বরং স্বেচ্ছায় ঋণ গ্রহীতা যে পরিমাণ কিস্তির টাকা দিচ্ছে আমরা তাই গ্রহণ করছি।