UsharAlo logo
শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বাংলাদেশ কোয়াডে যোগ দিলে সম্পর্ক যথেষ্ট খারাপ হবে

usharalodesk
মে ১১, ২০২১ ১:৩৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ‘কোয়াড্রিল্যাটারাল সিকিউরিটি ডায়ালগে (কোয়াড)’ বাংলাদেশ যোগ দিলে চীনের সঙ্গে এ দেশের সম্পর্ক ‘যথেষ্ট খারাপ’ হবে বলে সতর্ক করেছে ঢাকায় চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী উই ফেংহে সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরে এই বার্তা দিয়েছে। গতকাল সোমবার বাংলাদেশে কূটনৈতিক সংবাদদাতাদের সংগঠন ডিকাবের সদস্যদের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় চীনের রাষ্ট্রদূত এ কথা বলেন।
চীনের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, চীন ‘কোয়াড’কে তার দেশের বিরুদ্ধে জোট হিসেবে দেখে। এটি ৪টি দেশের একটি জোট। এটি চীনের জন্য কী তা আমরা সবাই জানি। এ কারণেই জাপান হাত মিলিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে।
উল্লেখ্য যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত কোয়াডের সদস্য। এই জোটকে অনেকেই ‘এশিয়ান ন্যাটো’ বলে অভিহিত করে থাকে। বাংলাদেশ ও চীন তাদের সম্পর্ককে ‘স্ট্র্যাটেজিক’ বলে উল্লেখ করে থাকেন। চীন বাংলাদেশের বড় উন্নয়ন অংশীদার। চীনের ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ (এক বলয়, এক পথ) পরিকল্পনাতেও বাংলাদেশ যুক্ত হয়েছে।
কোয়াড প্রসঙ্গে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ‘আমরা চাই না, বাংলাদেশ কোনোভাবেই এই জোটে অংশ নিক।’
রাষ্ট্রদূত আরো বলেছে, ‘ইতিহাসে বারবার প্রমাণিত হয়েছে যে এ ধরনের অংশীদারি আমাদের প্রতিবেশীদের নিজেদের সামাজিক, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনগণের মঙ্গলকে নিশ্চিতভাবে ব্যাহত করে।’
কোনো সামরিক জোটে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সম্প্রতি বলেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’—এই নীতির আলোকে বাংলাদেশ সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখছে। বাংলাদেশ কোনো সামরিক জোটে যোগ দেয়নি এবং যোগ দেওয়ার পরিকল্পনাও নেই।
রোহিঙ্গা নিয়ে শিগগিরই কোনো ত্রিপক্ষীয় আলোচনা নয়: এদিকে ডিকাব সদস্যদের সঙ্গে আলোচনায় চীনের রাষ্ট্রদূত বলেছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে চীন যোগাযোগ করতে পারছে না। মিয়ানমারে পরিস্থিতিও এখনও স্বাভাবিক নয়।
মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে চলমান সংঘাতের দিকে ইঙ্গিত করে রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ‘আমরা অদূর ভবিষ্যতে ত্রিপক্ষীয় (বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীন) আলোচনার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে চীনা রাষ্ট্রদূত জানান, ‘ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্ট’ পেলে তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে সক্রিয় হওয়ার ব্যাপারে চীন আন্তরিকভাবে বিবেচনা করবে। তিনি বলেছেন, চীনে প্রস্তাব পাঠানোর আগে বাংলাদেশের উচিত সমীক্ষা প্রতিবেদন সম্পন্ন করা।
ডিকাব সভাপতি পান্থ রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মঈনুদ্দীন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
চীনা রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যে বিস্ময়: বাংলাদেশ কোয়াডে যোগ দেয়নি। যোগ দেওয়ার বিষয়ে আগ্রহও দেখায়নি। কিন্তু ঢাকায় বসে চীনের রাষ্ট্রদূত কোয়াডে যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে রীতিমতো যে ‘হুমকি’ দিয়েছেন তাতে কূটনৈতিক ও বিশেষজ্ঞ মহল রীতিমতো বিস্মিত।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, সম্ভবত চীন এখন এই অঞ্চলে প্রকাশ্যেই তার কৌশলগত বার্তা দিতে চাইছে। আর সেই বার্তাটি হলো স্বার্থ ক্ষুণ্ন হলে চীন তার প্রতিক্রিয়া দেখাবে। রাষ্ট্রদূতের এভাবে বলাটা অনেকটাই আগ্রাসী। চীনের ভূমিকা বদলাচ্ছে—এমন ইঙ্গিতও মিলছে রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যে। সম্প্রতি চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা সফর, গত বছর নেপাল সফর এবং বর্তমানে কভিড মোকাবেলায় টিকাসহ অন্যান্য সহযোগিতা দেওয়া ও জোট গঠন করা—এসব বিষয় বিবেচনায় নিলে দেখা যাবে চীন এ অঞ্চলে অতীতের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে উঠছে। চীন এখন চাচ্ছে, যারা তার সহযোগিতা নেবে তারা তার পক্ষে থাকবে।

(ঊষার আলো- এম.এইচ)